দুই বছর আগে প্রথমবার সাফ জিতে আসা মেয়েদের নিয়ে সে কি মাতামাতি! দেশকে শিরোপা উপহার দেওয়া মেয়েরা ভেসে গিয়েছিলেন সংবর্ধনায়, উদযাপন করেছিলেন ছাদখোলা বাসে চড়ে। পেয়েছিলেন আর্থিক সম্মাননাও। বাফুফেও মেয়েদের আর্থিক নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মাসিক বেতনকাঠামোও ঠিক করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই বেতন আর নিয়মিত দিতে পারেনি।
এতে দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় নানা সময়ে সাবিনারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। দুই বছরের ব্যবধানে গত বুধবার আবারও সাফের শিরোপা উৎসব করেছেন মেয়েরা। দুই মাসের বেতন বকেয়া নিয়েই এই টুর্নামেন্ট খেলেছেন মেয়েরা। যে কারণে ঘুরেফিরে আবারও আলোচনায়, এবার কি বেতনটা নিয়মিত পাবেন মেয়েরা?
বাফুফেতে এসেছে নির্বাচিত নতুন কমিটি।
কাজী সালাউদ্দিনের জায়গা নিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। নতুন সভাপতির কাছে সাবিনারাও নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে চান, যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে আর্থিক দিকটি। আগের দিন ঢাকায় ফিরে গতকাল বাফুফে ভবনে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেল বাংলাদেশ অধিনায়ককে। এরই এক ফাঁকে বেতনটা নিয়মিত পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন সাবিনা, ‘বর্তমান সভাপতি তাবিথ আউয়াল স্যারের সঙ্গে এখনো আমাদের কথা হয়নি।
দেশের বাইরে আছেন তিনি। তবে আমি উনার ইন্টারভিউ দেখেছি, যেখানে উনি মেয়েদের ফুটবলের উন্নতির কথা বলেছেন। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার কথা বলেছেন। চাওয়া-পাওয়া তো অবশ্যই আছে। আমি আশা করছি, আমাদের আর্থিক বিষয়গুলোর পাশাপশি উনি আমাদের বাকি সব চাহিদাও পূরণ করবেন।
আমরা চাইব বেতনটা যেন বাড়ানো হয়। বেতনটা যেন নিয়মিত হয়।’
২০২২ সালে সাফ জেতার পর বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচের সঙ্গে ঘরোয়া ফুটবলের মান বাড়ানোর আশায় ছিলেন মেয়েরা, কিন্তু আদতে তা হয়নি। ম্যাচ তো বাড়েইনি, বরং টাকার অভাবে অলিম্পিক বাছাইয়ে অংশ নেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক সূচিও কাজে লাগাতে পারেনি ঠিকঠাক। ঘরোয়া লিগ মাঠে গড়ায়নি গত বছর। এত দিন যেভাবে চলে আসছে, সেসবে পরিবর্তন চেয়ে সাবিনার দাবি, ‘আমাদের নারী লিগ যেন নিয়মিত হয় এবং সেটা যেন দীর্ঘ সময় ধরে হয়। মাঠে যেন খেলাটা থাকে। এ ছাড়া আরো বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেন খেলতে পারি।’ সাফের গণ্ডি পেরিয়ে মেয়েদের চোখ এখন এশিয়ার ফুটবলে নিজেদের চেনানো। যে ভারতকে টানা দুটি সাফে উড়িয়ে দিয়েছেন মেয়েরা, তারাই কিনা এশিয়ার শীর্ষ দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত খেলছে। তাহলে সাবিনারা নয় কেন? বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘এখন আমরা যেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই পড়ে না থাকি। আমরা যেন পুরো এশিয়ার মধ্যে নিজেদের মেলে ধরতে পারি।’
আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা। তাঁর কাছে মেয়েদের কোনো চাওয়া আছে কি না, প্রশ্নের জবাবে সাবিনা বলেছেন, ‘মেয়েরা খুবই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। কিছুদিন আগে যে বন্যা হয়েছে, সেখানে কয়েকজন ফুটবলারের বাসায় পানি উঠে গেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের পরিবারের মানুষ যখন গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে, তখন সত্যি বলতে তাদের থাকার কোনো জায়গা থাকে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করব, মেয়েদের কোনো জায়গা বা ফ্ল্যাট দিতে পারেন কি না। সেটিই হয়তো মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হবে।’
সাবিনার আকুতি
চাওয়া-পাওয়া তো অবশ্যই আছে। আমি আশা করছি, আমাদের আর্থিক বিষয়গুলোর পাশাপশি উনি আমাদের বাকি সব চাহিদাও পূরণ করবেন। আমরা চাইব বেতনটা যেন বাড়ানো হয়। বেতনটা যেন নিয়মিত হয়।
কোন ক্যাটাগরিতে কত ছিল
১৫ ফুটবলার পেতেন ৫০ হাজার টাকা করে।
১০ জন পেতেন ৩০ হাজার করে।
৪ জন পেতেন ২০ হাজার করে।
২ জন পেতেন ১৫ হাজার করে।
নতুন আসা বা বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে খেলা ফুটবলারদের জন্য ছিল আলাদা ক্যাটাগরি।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.