ক্রিকেট

দুই তরুণের ব্যাটে মান বাঁচানো জয়

আফগানিস্তানের দেওয়া টার্গেট ছিল মামুলি। ওয়ানডের ‘শক্তিশালী দল’ হিসেবে দাবি করা বাংলাদেশের কাছে ২১৫ রান কোনো বিষয়ই হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় এই ছোট লক্ষ্যই বড় হয়ে গেল বাংলাদেশর কাছে! ২৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর সবাই ধরেই নিয়েছিল বাংলাদেশ আরেকটি লজ্জার হার বরণ করতে যাচ্ছে। তবে সেটি হতে দিলেন না দুই তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদি মিরাজ।

৭ম উইকেটে দুজনের অসাধারণ জুটিতে ৪ উইকেটের দারুণ জয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।  

রান তাড়ায় নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ১৪ রানের মাঝে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর লিটন দাস ফিরে যান। যদিও শুরুটা হয়েছিল আশা জাগানিয়া। প্রথম ওভারে ফজল হক ফারুকীকে দুই বাউন্ডারি মেরে ১২ রান নিয়েছিলেন তামিম। পরের ওভারে মুজিব উর রহমান দেন মাত্র ১‌ রান। ফিরতি ওভারে এসেই ফারুকী তুলে নেন লিটনকে। ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটকিপার রহমতুল্লাহ গুরুবাজের গ্লাভসবন্দি হন ৮ বলে ১ রান করা লিটন। একই ওভারের পঞ্চম বলে অধিনায়ক তামিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আফগান পেসার। আউট হওয়ার আগে তামিমের সংগ্রহ ৮ বলে ৮ রান।  

১৪ রানে দুই ওপেনার ফেরার পরও বিপদ কাটেনি। উইকেটে এসে ভরসা দেওয়ার বদলে ৩ রানে আউট হন মুশফিক। শিকারী সেই ফারুকী। আম্পায়ার লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ নেন মুশফিক। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়। অভিষিক্ত ইয়াসির আলীর সামনে কিছু করে দেখানোর দারুণ সুযোগ ছিল। সেটা তিনি পারেননি। ফারুকির চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে তার নামের পাশে ৪ বলে ০ রান! ‘ডাক’ মেরে শুরু হলো ইয়াসিরের ওয়ানডে ক্যারিয়ার।

ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব আল হাসানও। ১৫ বলে ১০ রান করে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে তিনি মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, ২৮ রানে বাংলাদেশের ইনিংস অর্ধেক শেষ হয়ে যায়! আফগানিস্তানের বিপক্ষে এর আগে কখনোই এত কম রানে ৫ উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। আগেরটি ছিল ৭৯ রানে ৫ উইকেট। আর সব প্রতিপক্ষ মিলিয়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ১২ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।  

বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ৪৫ রানে। লেগ স্পিন সুপারস্টার রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ৮ রান করা মাহমুদউল্লাহকে গুলবাদিন নাইবের তালুবন্দি করেন দলের স্কোর একশ পার হবে কিনা সেটা নিয়েই শংকা তৈরি হয়। শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটার আফিফ হোসেন আর মেহেদি মিরাজ টিকে থাকার লড়াই করতে থাকেন। এই জুটিতেই ২২তম ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের স্কোর একশ ছাড়িয়ে যায়। ৩০ ওভার শেষে ফ্লাডলাইটের আলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।  

বিরতি থেকে ফিরে ৬৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পূরণ করেন আফিফ হোসেন। তার সঙ্গী মিরাজও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন ৭৯ বলে। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৯ রানের। তবে আফিফ-মিরাজের ব্যাটে সেটা কোনো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়নি। ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। আফিফ ১৫৫ বলে ১১ চার ১ ছক্কায় ৯৩* আর মেহেদি মিরাজ ১২০ বলে ৯ চারে ৮১* রানে অপরাজিত থাকেন। অবিচ্ছিন্ন ৭ম উইকেট জুটিতে আসে ২২৫ বলে ১৭৪* রান। ১০ ওভার বল করে ৫৪ রানে ৪ উইকেট নেন ফারুকী। ১টি করে উইকেট নেন মুজিব এবং রশিদ।  

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রানে অল-আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশি পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ছিল দেখার মতো। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২টি করে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান এবং শরীফুল ইসলাম। মিরাজ কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ২৮। সমান ওভারে শরীফুল দিয়েছেন ৩৮ আর তাসকিন ৫৫ রান। আফগানদের হয়ে ৮৪ বলে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন নাজিবুল্লাহ জারদান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রহমত শাহর।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker