সর্বোত্তম আমল: জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে রসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (বুখারী : ৬০৪৪)।
সাহাবিদের উদ্দেশ্যে রসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন উত্তম আমলের কথা বলে দিব না? যা তোমাদের প্রভুর নিকট অত্যন্ত পবিত্র, যা সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন, এবং স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যয় করা অপেক্ষা উত্তম আর শত্রুর মোকাবিলায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের ঘাড়ে আঘাত করা আর তারা তোমাদের ঘাড়ে আঘাত করার চেয়েও উত্তম? সাহাবাগণ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, ‘তা হলো আল্লাহ তায়ালার জিকির।’ ( ইবনে মাজাহ : ৩৭৯০)।
নিজেকে এমনভাবে জিকিরে অভ্যস্ত করা উচিত যাতে মৃত্যুর সময় জবানে জিকির জারি থাকে। একবার হযরত মুআজ বিন জাবাল রসুল (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসুল (সাঃ) সর্বোত্তম আমল কোনটি? রসুল (সাঃ) বললেন ‘মৃর্ত্যুর সময় যেন তোমার জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত থাকে।’ (মুজামুল কাবীর : ১৮১)।
জিকির মানসিক প্রশান্তির মহৌষধ: জিকির ছেড়ে দিয়ে দুনিয়ার জীবনে ভাল থাকা যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ (সূরা ত্বহা : ১২৪)।
মানসিক প্রশান্তির জন্যও জিকির এক মহৌষধ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা রাআদ : ২৮)।
শয়তান থেকে আত্মরক্ষা: শয়তানের ধোকা থেকে বাচার রক্ষামন্ত্র হল এই জিকির। জিকির ছেড়ে দিলে বান্দা আল্লাহর জিম্মাদারী থেকে বেড়িয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সহচর।’ (সূরা জুখরুফ : ৩৬)।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।’ বলবে, সে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব লাভ করবে। আর তার নামে লেখা হবে ১০০ টি সাওয়াব এবং তার আমল থেকে ১০০ টি গুনাহ মুছে ফেলা হবে। আর সে সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তানের ধোকা থেকে মুক্ত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভালো আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে তার থেকে বেশি নেক আমল করেছে। (বুখারী : ৬০৪০)।
যার কলবে আল্লাহর জিকির জারি থাকে সেখানে শয়তান থাকতে পারেনা। প্রিয় নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘শয়তান আদম সন্তানের কলবে জেঁকে বসে থাকে যখনই আল্লাহর যিকির করে ছিটকে পড়ে এবং যখনই কলবের জিকির বন্ধ থাকে সে কুমন্ত্রনা দেয়।’ (মুসান্নাফে আবি শায়বাহ : ৩৫৯১৯)।
গুনাহ মার্জনার জিকির: রসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। (মুসলিম: ১৩৮০)।
জিকিরে আনে সফলতা: জিকিরে মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় আর জিকির বিমূখতায় আল্লাহর সাথে বান্দার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আল্লাহর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া মানব জীবনের বড় ব্যার্থতা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকূন: ৯)।
রসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘ফরজ নামাযের পরে কয়েকটি কালেমা এমন আছে যেগুলো পাঠকারী ব্যর্থ হয় না। সে কালেমাগুলো হচ্ছে, প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার।’ (মুসলিম : ১৩৭৭)।
জিকির হচ্ছে সফলতার সোপান। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সূরা আনফাল : ৪৫)
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.