বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনায় বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ

জনরোষের মুখে শুধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনা মানতে পারছেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা। তাঁরা বলছেন, তিনি দেশ ছেড়ে যদি যাবেনই, তাহলে শেষ মুহূর্তে দলের নেতা-কর্মীদের কেন আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি দাঁড় করালেন?

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর মন্ত্রিসভার ছয়জন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, শেখ হাসিনা সোমবারই দেশ ছাড়বেন, এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। এ ছাড়া তিনি পদত্যাগ করতে পারেন, এমন কোনো ইঙ্গিতও দেননি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়বেন, গতকাল দুপুরের দিকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এমন খবর শোনার পর মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের নেতা-কর্মীরা অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। এরপর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য ও নেতা-কর্মী নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। অবশ্য পরিস্থিতির কারণে দু-একজন রোববার রাতে ও গতকাল সকালে দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমানসহ বেশির ভাগ মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতা দেশেই ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যার পরও কারও কারও মুঠোফোন খোলা ছিল। তবে বিকেলের দিকে ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবিরসহ অনেকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কেউ কেউ ধারণা করছেন, তাঁরা হয় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন, নতুবা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ এলাকাতেই গতকাল দুপুর পর্যন্ত ছিলেন বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এরপর তিনি কোথায় গেছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না। বিকেলের পর থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মন্ত্রিসভার সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, জনরোষের মুখে সবাইকে রেখে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনায় তাঁরা হতাশ, বিপর্যস্ত ও ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং জেদের কারণে দল ও নেতা-কর্মীরা বিপদে পড়েছেন। তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও অন্যদের রেখে গেছেন বিপদে।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা গত রোববার সকালে দেশে আসেন। গতকাল তাঁকে সঙ্গে নিয়েই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বাইরে থাকেন। শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও আগেই বাংলাদেশ ছেড়েছেন।

শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত রোববার রাতে কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন; কিন্তু এটি আইনে নেই বলে তিনি উড়িয়ে দেন।

মন্ত্রিসভার আরেকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ রকম কিছু ঘটবে, সেটি চিন্তায় ছিল না। তবে পরিস্থিতি ভালো মনে না হওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য স্ত্রী-সন্তানকে গত রোববার বিদেশে পাঠিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেই তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে, এমন ভাবনা ছিল। কিন্তু সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে।

প্রভাবশালী আরেকজন মন্ত্রী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সরকারপ্রধান হিসেবে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। এখন যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকায় কমই গেছেন। গতকাল বিকেল থেকে তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছিলেন।

আওয়ামী লীগের পাঁচজন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনা দেশে থেকে কারাগারে গেলে দলের নেতা-কর্মীরা এতটা বিপদে পড়তেন না।

একজন সংসদ সদস্য বলেন, প্রয়াত স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পতন হয় গণ-অভ্যুত্থানে। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি; বরং জেলে গেছেন। শেখ হাসিনা দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হয়ে কীভাবে নেতা-কর্মীদের রেখে বিদেশে চলে গেলেন, এটা মাথায় আসছে না। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের এমন বিপর্যয় হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker