বিবিধ

দূর্বাঘাস অত্যন্ত ফলপ্রসূ বিভিন্ন জটিল রোগের মহা ঔষধ; জানুন এর উপকারীতা

“যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই,
পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন”

ছোট এবং নগণ্য ভেবে কোনো বস্তুকে অবহেলা করা ঠিক নয়। কারণ এসব অতি ক্ষুদ্র জিনিসের মধ্যেও মহামূল্যবান রত্ন থাকতে পারে। সেজন্য বস্তুর আকার, আয়তন যাই হোক না কেন তা তাচ্ছিল্য না করে বরং গবেষণাপূর্বক এর বিস্ময়কর সম্ভাবনা খুঁজে বের করা উচিত।দূর্বাঘাস ঘর থেকে বের হতেই চোখে পড়ে, হয়তবা অবহেলায় পায়ে মাড়িয়ে যাই কিন্তু এ দূর্বাঘাসের মাঝেও রয়েছে অজানা অনেক দামী বিষয়।

রাস্তার পাশে কিংবা যত্রতত্র অযত্ন অবহেলায় পতিত জমি, মাঠে-ঘাটে ও বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে বেড়ে ওঠে এই ঘাস। নদীর তীরবর্তী জমিতে দূর্বা যেন আপন আমেজে নরম সবুজ গালিব।  দূর্বার পাতা সরু ও লম্বা। মাটির নিচে গুচ্ছ মূল থাকে। প্রচণ্ড রোদে দূর্বা সহজে মরে না। প্রতিকূল পরিবেশেও দূর্বাঘাস সহজে টিকে থাকতে পারে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও পুরাণে দূর্বা হচ্ছে দীর্ঘায়ু ও কল্যাণের প্রতীক আর প্রাচীন আর্যসমাজে ধান ছিল ধন বা ঐশ্বর্যের প্রতীক। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজাপার্বণাদি ছাড়াও বিশেষ করে বিয়ে, অন্নপ্রশাসন ও অন্যান্য শুভকাজে মঙ্গল কামনায় দূর্বা ও ধান মস্তকে দিয়ে ধন-ঐশ্বর্য ও দীর্ঘায়ু লাভে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক লোকেরাও এখনো কোনো সামাজিক শুভ বরুণ অনুষ্ঠানে ধান ও দূর্বা দিয়ে বরণডালা সাজায়। ঐতিহ্যগত ভাবে শক্ত অবস্থানেই রয়েছে দূর্বাঘাস।

আয়ুর্বেদীয় মতে দূর্বাঘাস মহৌষধ। শরীরের কোথাও কোনো অংশ কেটে গেলে ঐ স্থানে দূর্বাঘাস পিষে লাগালে সঙ্গে সঙ্গেই রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়। দূর্বাঘাসের রয়েছে ঔষধিগুণ।

সুশান্ত কুমার রায়ের বর্ণনায়, আঘাতজনিত রক্তপাত, শ্বেতপ্রদরজনিত দুর্বলতা, অধিক ঋতুস্রাব, চুলপড়া, চর্মরোগ, দন্তরোগ ও আমাশয়ে দূর্বা খুবই উপকারী। দূর্বাঘাসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, এনজাইম, শর্করা, আঁশ, ফ্লাভোনয়েডস এবং বেশ কিছু অর্গানিক অ্যাসিড। এছাড়াও টারপিনয়েড যৌগ অরুনডেইন ও লুপিনোন বিদ্যমান।

জানা যায়, প্রচলিত নাম- দুর্বা ঘাস, ইউনানী নাম- দুর্বা-দুব, আয়ুর্বেদিক নাম-দুব, ইংরেজী নাম- Bermuda Grass, Dove Grass, বৈজ্ঞানিক নাম- Cynodon Dactylon Pers, পরিবার- Poaceae (Gramineae)।

আ: খালেক মোল্লা সম্পাদিত লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; আক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা- ২৩১-৩২ উল্লেখ করা হয়েছে দূর্বাঘাসের ঔষধি গুন সম্পর্কেঃ-

১। রক্তশূণ্যতাঃ দূর্বার রসকে সবুজ রক্ত বলা হয়। কারণ রস পান করলে রক্তশূণ্যতার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। এই রস রক্ত পরিষ্কারক এবং লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো ছাড়াও চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সহায়তা করে। এজন্য নগ্ন পায়ে ঘাসের উপর হাঁটতে হয়।

২। দুর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রস্রাবে কষ্ট হয় অথচ পাথুরী রোগ হয়নি এ’রকম ক্ষেত্রে দুর্বার রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল দেয়। তবে অর্শরোগ থাকলে এটা খাওয়া যাবেনা।

৩। কাটা ও পোড়াঃ কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তক্ষরনে দুর্বা ঘাসে সামান্য পানি মিশিয়ে পিষে কাটা স্থানে বেধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান দ্রুত জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে দুর্বার শিকড় ব্যবহার করলে বেশী উপকার পাওয়া যায়।

৪। ত্বকের সমস্যাঃ দূর্বাঘাসে বিদ্যমান প্রদাহরোধী ও জীবাণুরোধী গুণের কারণে তা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চুলকানি, লাল লাল ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। এজন্য দূর্বাঘাস ও হলুদ পিসে ত্বকে লাগাবেন। দূর্বার রস পান করলে ঘনঘন পিপাসা লাগা থেকে মুক্তি মেলে।

৫। হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ দূর্বাঘাস নিয়মিত সেবন করলে পেটের অসুখ থেকে মুক্তি মেলে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এর রস পানে পিত্তজনিত কারণে সৃষ্ট বমি ঠিক হয়ে যায়।

৬। চুল পড়া প্রতিরোধেঃ চুল পড়া প্রতিরোধে একটি পাত্রে এক লিটার নারিকেল তেল মৃদুতাপে জ্বাল করে ফেনা দুর করে নিতে হবে। তারপর দুর্বার ঘাসের টাটকা রস ২০০ মিলি সম্পূর্ণ তেলে মিশিয়ে পুনরায় জ্বাল দিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন গোসলের ১ ঘন্টা আগে ঐ তেল চুলে মাখতে হবে। নিয়মিত২-৩ মাস প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।

৭। বমি ভাব বন্ধেঃ বমি ভাব বন্ধের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি সহকারে ১ ঘন্টা পর পর খেতে হবে, বমি ভাব কেটে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

৮। আমাশয় রোগের জন্যঃ আমাশয় রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস৪-৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যাবে।

৯। অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য ঃ অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ প্রতিদিন মধু সহ ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

১০। আয়ুর্বেদীয় মতে রক্ত পিত্তে দুর্বা ঘাস মহৌষধ। এরোগে মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে। এক্ষেত্রে দুর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে রোগের উপশম হয়।

১১। শ্বেতপ্রদরজনিত দূর্বলতায় দুর্বা ঘাস ও কাঁচা হলুদের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে খেলে রোগী দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠে।

১২। দুর্বা ঘাস সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় ওষুধ। গর্ভধারণে অসমর্থ হলে দুর্বা ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন/চারদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker