জাতীয়

শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিৎ; লতিফ সিদ্দিকী

শেখ হাসিনার রাজনৈতিকভাবে মৃত্যু ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমি বলব নিঃসন্দেহে তিনি রাজনৈতিক আত্মহত্যা করেছেন। তিনি দুরাত্মা-দুরাচারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। তাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’

আয়নাঘর, গুমঘর, ক্রসফায়ার, হামলা-মামলা দিয়ে শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বীকে অস্থির করে রেখেছিলেন মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছেন তার পরিণতি এরকমই হবে। তার দেশত্যাগ স্বাভাবিক ছিল। এরশাদকে বিতাড়িত হতে হলেও দেশত্যাগ করতে হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। প্রাণরক্ষা হবে না জেনেই তিনি পালিয়ে গেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত সময়ে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নম্বর সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে সবার মনের মণিকোঠায় স্থান পাবেন বলেও মনে করেন লতিফ সিদ্দিকী। আমার দেশ-এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।

বর্ষীয়ান রাজনীতিক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন নির্বাচিতদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

ওই বছর সেপ্টেম্বরে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দল থেকে বহিষ্কার ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। তার সংসদ সদস্যপদ থেকে অপসারণে স্পিকারকেও চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। পরে অবশ্য তিনি নিজেই সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

লতিফ সিদ্দিকী সম্প্রতি আমার দেশকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার গুলশানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত সাক্ষাৎকারে তিনি পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে যাওয়াসহ তার আমলের নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের কারণও উল্লেখ করেছেন।

নিচে সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

আমার দেশ : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

লতিফ সিদ্দিকী : আমার কোনোদিনই ড. ইউনূসের সঙ্গে সখ্য ছিল না। ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছত্রছায়ায় যে গণবিস্ফোরণ হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আমি সমর্থন করেছি। অকপটে সমর্থন করেছি। ওই গণবিস্ফোরণের পর আমি ভীষণ শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু ৫ আগস্ট আমি ঢাকা শহরে যে দৃশ্যটি দেখলাম! আমার শঙ্কা হলো এখন দেশের অবস্থা কী হবে? বিকালে সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান যখন ঘোষণা করলেন আমি দেশের সব জানমালের দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনারা আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। এ ঘোষণায় ভীষণ শঙ্কিত ছিলাম। তবে রাতের মধ্যেই আমার এ শঙ্কাটি কেটে গেল, কারণ প্রধান উপদেষ্টা রূপে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামটি ভেসে উঠল।

আশান্বিত হলাম এজন্য যে, তিনি প্রধান উপদেষ্টা হলে একটি সম্ভাবনা আছে। মানুষ তাকে গ্রহণ করবে। তিনি জনআকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। সত্যিকার অর্থে দেশবাসী তার প্রতি আস্থা-বিশ্বাস ও আনুগত্য স্থাপন করেছে।

কাজেই আমি ইউনূস ও তার পরিষদের ব্যর্থতা এবং সফলতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমার বুঝমতে জনগণ এখন একটু হতাশ। তারা শঙ্কিত। তারা আশ্বস্ত হতে পারছে না। আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারীরা ১৫ বছর যেটা করেছে, ৫ আগস্টের পর প্রতীক্ষিত ক্ষমতাসীনরা বোধহয় তার থেকে বেশিই করে ফেলেছে। আমাদের স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি। কাজেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। সরকারের পুলিশ, আমলাসহ যেসব স্থায়ী কর্মচারী রয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দুর্বৃত্তপনায় লিপ্ত ছিল। না হয় আরেক দলের নামে দুর্বৃত্ত, না হয় স্বাধীনতার বিরোধীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট।

আমার দেশ : অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় কোনো দুর্বলতা আপনি দেখছেন?

লতিফ সিদ্দিকী : ড. ইউনূসকে আপনারা জোর করে নিয়ে আসছেন। তিনি কিন্তু নিজ থেকে বলেননি তাকে আনতে হবে। ড. ইউনূস কী করবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি দল ছিল। তার প্রতি দেশের মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল। জিয়াউর রহমানের দল ছিল। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য শক্তিগুলো এককাট্টা হয়ে তার ছায়াতলে ছিল। এরশাদের বিষয়টিও এরকমই ছিল।

খালেদা জিয়া তার স্বামীর গড়া দল পেয়েছেন। শেখ হাসিনাও বাবারটা পেয়েছেন। কিন্তু ড. ইউনূস ও তার পরিষদের হাতে কি আছে? তার কাছে নিজস্ব শক্তি বলে কিছু আছে? তাই তিনি কী করছেন? তার কার্যক্রমে হতাশ করছেন কি না সেটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমি আশাবাদী। সংস্কার হয়তো কিছু করতে পারবেন না। বাহাত্তরে সংবিধান হয়েছিল।

সেখানে আমিও স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু কোনোদিনও সংবিধান মানা হয়েছে কি? মানুষের অধিকার স্বীকার করা হয়েছে নাকি? বরং ১৯৭৪ সালে বিশেষ আইন পাস করানো হলো। সংবিধানে যেটা লেখা আছে তা কার্যকর হয় না। ড. ইউনূস বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মানুষ। তিনি যদি হিল্লি, দিল্লি, ওয়াশিংটনের কথা না শোনেন, বাংলাদেশের মানুষের কথা শোনেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। ওনাকে যারা সমর্থন করেছেন, তারাও কিন্তু নির্বাচন চায়। নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও জনমতের প্রতিফলন করতে পারেন কি না সেটা ওনার দেখা দরকার। এটা যদি তিনি করতে সক্ষম হন। যদি সঠিক নির্বাচন করতে পারেন- তাহলে কোনো কিছুই তার লাগবে না, তিনি ইতিহাসে বায়ান্ন থেকে আজ পর্যন্ত যারা আছেন, তাদের মধ্যে এক নম্বর সম্মানীয় ব্যক্তি হয়ে যাবেন।

শেখ হাসিনাকে জনগণ বিতাড়িত করেছে। তাহলে তো একটা কিছু লাগবে। বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে উত্তরপাড়া এসে দক্ষিণপাড়া দখল করতে পারছে না।

আমার দেশ : আগামী দিনে কেমন সরকার দেখবেন বলে আশা করছেন?

লতিফ সিদ্দিকী : ৫ আগস্টের পর পরই জাতীয়তাবাদী দল রাষ্ট্রক্ষমতায় চলে গেছে, এটা ধ্রুবতারার মতো সত্য ছিল। কিন্তু আগেই বলেছি, তাদের সমর্থকদের কার্যকলাপে ইতোমধ্যে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আমি কামনা করি, আগামী দিনে নিরঙ্কুশ সরকার যেন না হয়। নিরঙ্কুশ সরকার হলে তিনি শেখ হাসিনা হয়ে যাবেন।

যদি নিরপেক্ষ ভোট, অবাধ নির্বাচন হয়। সরকারি কর্মচারী, হোন্ডা, গুন্ডা, অর্থ কেউ যদি প্রয়োগ করতে না পারে, ভোটটা যদি সাচ্চা হয়, তাহলে আগামী সরকার হবে যৌথ। সেখানে বিএনপিপন্থি থাকবে, জামায়াতও থাকবে। হয়তো আওয়ামী লীগপন্থিও থাকবে। তাই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে বাংলাদেশে। আমি চাই উপদেষ্টা পরিষদ এখন এদিকে মনোযোগী হবেন।

আমার দেশ : শেখ হাসিনার পরিণতি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

লতিফ সিদ্দিকী : পৃথিবীতে কারো পরিণাম ও পরিণতি প্রত্যাশিত হয় না। অঙ্ক কষে কোনোকিছু ঘটে না। সব ঘটনাই অভূতপূর্ব। ৫ আগস্ট ছিল অভূতপূর্ব। শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ চালিয়েছেন, তার পরিণতি তো এরকমই হবে। আয়নাঘর, গুমঘর, ক্রসফায়ার; প্রতিদ্বন্দ্বীকে হামলা-মামলায় অস্থির করে রাখা- এসবই তার সময়ে হয়েছে।

আমি ভীষণভাবে অস্থির ও মর্মাহত আমার দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যে রাষ্ট্র বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে পারে না, যে রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন সরকারপ্রধানের সহযোগিতা ও অনুমোদন ছাড়া কি লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে? শেখ হাসিনার ভাগ্য ও পরিণতি আল্লাহ নির্ধারণ করবে।

আর আপনি প্রতিপক্ষকে যত বেশি আঘাত করবেন, তার মধ্যে তত বেশি প্রতিশোধ স্পৃহা বাড়বে। তাই বলব তার দেশত্যাগটা ছিল স্বাভাবিক। এরশাদকে বিতাড়িত হতে হয়েছে, দেশত্যাগ করতে হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে প্রাণরক্ষার্থে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। প্রাণরক্ষা হবে না দেখেই পালিয়ে গেছেন। তার কার্যক্রমই বলে দিয়েছে যে, তিনি গণতান্ত্রিক পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেননি।

আমার দেশ : আওয়ামী লীগের কর্মসূচি কীভাবে দেখছেন? শেখ হাসিনার ফেরার সুযোগ আছে কি না?

লতিফ সিদ্দিকী : নদীর প্রবাহিত পানি চলে গেলে তা ফেরত আসে না। উজানে সব সময়ে প্রবাহ থাকলে পানি আসে। এখন জনমতটা কী? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। আপনি কার বিরুদ্ধে বলবেন? আমাদের স্বভাব বা চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়েছে? হওয়ার জন্য কোনো প্রচেষ্টা আছে? হ্যাঁ, তবে শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সাহস পেলে তার ফেরার সুযোগ আছে শতভাগ। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। ফলে তিনি একটি বাধার মুখে আছেন। দেশে এলে বিচারের মুখোমুখি হবেন, হওয়া উচিত।

প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থায় তিনি আসবেন কি না? তিনি যদি মনে করেন তিনি অন্যায় করেননি। তিনি মোকাবিলা করবেন, তাহলে তিনি আসতে পারেন। বিচারের মুখোমুখি হতে সাহসী হলে দেশে ফিরতে তার কোনো সমস্যা নেই। সবার বিচার হওয়া উচিত। জবাবদিহিতা থাকা উচিত।

জীবনে হাজারো মামলার আসামি হয়েছি। আমার সঙ্গীদেরও দেখেছি। আমি দেখেছি বিচার বিভাগের চরিত্র। ওই সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। ড. ইউনূসকে দণ্ডিত করা হয়েছিল। তারেক রহমানকে অনেক মোকদ্দমায় দণ্ডিত করা হয়েছিল। যে দণ্ড দিয়েছিল, সে-ই তা এখন বাতিল করছে। স্বাধীনতার পর আমি দেখিনি সুবিচার হয়েছে। সত্যিকার অর্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যমান আইন সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়।

এই আইনটিও ক্ষমতাসীনদের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হয়। আওয়ামী লীগের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল এখন চিৎকার করছেন। একসময় তিনিও নির্দেশনা পাঠাতেন-এটা করেন ওটা করেন। এখন আপনি নিজেও সেই নির্দেশনার বলি হয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কাদেরকে বিচারক নিয়োগ করেছেন। ন্যায় ও নীতিবোধ যাদের নেই।

বিবেক ও বিবেচনা যার নেই। সত্য এবং সুন্দরের প্রতি যাদের আনুগত্য নেই। তারা বিচারক হন কীভাবে? বিচারকের আসনে যারা অধিষ্ঠিত তাদের প্রতি আমি আস্থাশীল নই। তাই এই ট্রাইব্যুনালে কী বিচার হবে সেটা বলব কীভাবে?

আমার দেশ : শেখ হাসিনার দেশে ফেরা কতটা সম্ভব?

লতিফ সিদ্দিকী : তিনি ৫ আগস্ট মনে করেছিলেন জীবনের ঝুঁকি আছে। তাই কৌশল হিসেবে চলে গেছেন। অনেকে পায়ে হেঁটে যান। উনি না হয় হেলিকপ্টারে গেছেন।

আমার দেশ : আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি স্লোগান দেয়Ñ যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা? আপনার কি মনে হয়, তিনি যোগ্য উত্তরসূরি?

লতিফ সিদ্দিকী : ১৯৭৭ সালে আমি দিল্লিতে যাই। শেখ হাসিনা তখন দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। আমাকেসহ আমার সঙ্গের অন্য দু’জনকে আমন্ত্রণ করেন। খাওয়া-দাওয়ার পর শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে বলেন, ‘আপনাকে তো রাজ্জাক ভাই (আব্দুর রাজ্জাক) ভয় পায়।

আপনি যদি বলেন, ‘হাসুকে ওয়ার্কিং কমিটির একজন সদস্য করে নাও তাহলে রাজ্জাক ভাই না করতে সাহস পাবেন না। বড় ভাই হিসেবে আমার জন্য আপনি এটা করবেন না? আমি বলেছিলাম ‘করব’। কাজেই তার যোগ্যতা-অযোগ্যতা কি আমার বলার প্রয়োজন আছে?

উত্তরাধিকার যেখানে, সেখানে তো যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। বলা হয়, দল শেখ হাসিনাকে এনেছে। এটা সত্য নয়, শেখ হাসিনা নিজেই আওয়ামী লীগে আসতে আগ্রহী ছিলেন, এটা শতভাগ সত্য।

আমার দেশ : শেখ হাসিনার পরিণতি আপনি কীভাবে দেখছেন?

লতিফ সিদ্দিকী : অন্যের মতামত কী জানি না। আমি নিঃসন্দেহে বলব শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। তিনি রাজনৈতিক আত্মহত্যা করেছেন। রাজনৈতিকভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। আর এটা ৫ আগস্টই নয়, সেদিন থেকে তিনি দুরাত্মা-দুরাচারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছেন।

প্রভুত্বকামী মানসিকতার দ্বারা যেদিন প্রাচীরবেষ্টিত হয়েছেন, সেদিনই তার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে, সেদিনই তার জৈবিক পিতৃত্বের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঔরসজাত সন্তান থেকে ছিন্ন হয়ে গেছেন। আইনত যত অধিকার থাক, কিন্তু চৈতন্যিকভাবে তিনি অধিকার হারিয়েছেন।

আমার দেশ : আপনাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়াটার কারণটা যদি জানাতেন।

লতিফ সিদ্দিকী : আমাকে বরখাস্ত নিয়ে অনেকে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে বলেন। এটা ছিল শেখ হাসিনার একটা কৌশল। উনি একটা শব্দ (হজ নিয়ে মন্তব্য) পেয়ে গিয়েছিলেন। আসল কথাটা হলো, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ ও করপোরেট আধিপত্য ছিল।

সেখানেই সংকট তৈরি হয়। সেলফোন কোম্পানিগুলো মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে খুশি করে যে অপকর্মগুলো করছিল সে বিষয়ে আমি একটি শক্ত পদক্ষেপ নিই। এজন্য এরা সবাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

তারা গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করে বিরাট আকারে আমার বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে। তখন আমাকে ডিফেন্ড করলে হেফাজতে ইসলাম এবং যারা কওমি মাতা বানিয়ে ফেলেছে তারা রুষ্ট হবে।

তাদের খুশি বা চাপে রাখতে রাজনীতিতে দু-একজনকে বলি দেওয়া তেমন কিছু নয়। শেখ হাসিনা দেখলেন লতিফ সিদ্দিকীকে কোরবানি দিলে অসুবিধা কোথায়? কাজেই দিয়ে দিলেন কোরবানি।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker