জাতীয়

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আসছে কাল, থাকবে যা যা

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। ঘোষণাপত্রে পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, অভিপ্রায়, লক্ষ্য ও ইশতেহার সেখানে লিপিবদ্ধ থাকবে। ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।

উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শুরু করে চা শ্রমিক পর্যন্ত জুলাই বিপ্লব ধারণ করে, এমন সব মানুষের উপস্থিতিতে দেওয়া হবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র।

আজ রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানী ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ প্রমুখ। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বেটার লেট দ্যান নেভার।

বিপ্লবের যে ঘোষণাপত্রটি সেটি আমাদের ৫ আগস্টে হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে ফ্যাসিবাদের পক্ষের যে শক্তিগুলো মিডিয়াতে, বুদ্ধিজীবী পাড়ায়, আমরা যাদের উৎখাত করেছি তারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। এটা এক ধরনের লেজিটিমেসিতেও প্রশ্ন করছে। ২০০০-এর অধিক শহীদ এবং ২০ হাজার ঊর্ধ্বে আহতের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা এই অভ্যুত্থানের লেজিটিমেসিকে প্রশ্ন করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষ ৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। এই যে মানুষ ৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে এটির একটি লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন থাকা উচিত। আমাদের যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে এবং মানুষ যে স্বপ্নে ৭২-এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে সেটির প্রাতিষ্ঠানিক দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করার জন্য আমরা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ বিকেল ৩টায় ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে, যেখান থেকে আমাদের এক দফা ঘোষণা করা হয়েছে ঠিক সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের প্রকলেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন আমরা ঘোষণা করব। এর মধ্যে আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, অভিপ্রায়, লক্ষ্য এবং ইশতেহার সেখানে লিপিবদ্ধ থাকবে।’

এটি কোনো দল বা নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির প্রকলেমেশন না উল্লেখ করে হাসনাত আরো বলেন, ‘আমরা ঐতিহাসিকভাবে যে একটি প্রতারিত প্রজন্ম, আমাদের যে স্বপ্নগুলো ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন স্তরে স্তরে বঞ্চিত হয়েছে, আমরা প্রতারিত হয়েছি।

এই প্রকলেমেশনের মধ্য দিয়ে আমাদের এই বঞ্চিতের ধারাবাহিকতা যেন আর না থাকে। আমাদের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার যেন প্রতিফলন ঘটে, সেটির একটি ইশতেহার জনগণের সামনে জাতির সামনে সেখানে ঘোষণা করা হবে। ৭২-এর যে সংবিধানের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, মুজিববাদী চেতনার বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে সেই বিরুদ্ধ দাঁড়ানোকে সেখানে স্বীকৃতি দেওয়া হোক আমরা চাই। মুজিব বাদী সংবিধান কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। যেখান থেকে এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ঠিক সেই জায়গা থেকে মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধানের কবর রচিত হবে।’

আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অপ্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা গণমানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যার রাজনীতি করেছে, যারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, আমরা প্রত্যাশা রাখছি এই জুলাই প্রকলেমেশনের মধ্য দিয়ে এই নাৎসিবাদী দলটিকে বাংলাদেশ থেকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে, আমরা চাই প্রকলেমেশনে বিচার নিশ্চিতে ইশতেহার ঘোষণা থাকবে।’

আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আমাদের আজকে এই পর্যায়ে এসে এখানে কথা বলতে হচ্ছে কারণ হচ্ছে- সেই ফ্যাসিস্ট স্ট্রাকচারগুলো এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা আমাদের সচিবালয়ে আগুন লাগাচ্ছে। তারা সচিবালয়ে আগুন দিয়ে মূলত আমাদের রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমাদের গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা তাদের চোখে চোখ রেখে সেদিন (৩১ ডিসেম্বর) তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করব। এখানে চা শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, কৃষক, খেটে খাওয়া মজুর, রেমিট্যান্স যোদ্ধা, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, আমলা, উপদেষ্টা, সংস্কৃতি কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ করেছে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে রাস্তায় নেমেছে তারা এই প্রকলেমেশনের অংশীদার হবে। তারা সেদিন শহীদ মিনারে এসে মিলিত হবে।’

সারজিস আলম বলেন, ‘প্রকলেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন- ঘোষণাটি সামগ্রিকভাবে পুরো বাংলাদেশের লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে। যে দলিল আমাদের নতুন স্বপ্নগুলোকে ধারণ করবে। যে দলিল আমাদের বিগত সিস্টেমগুলোকে রিজেক্ট করবে। নতুন যে সিস্টেম প্রত্যাশা করি, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ দেখাবে। ৩১ তারিখ যে ঘোষণাপত্র পাঠ হবে তা শহিদ পরিবারের স্বপ্ন হিসেবে থাকবে। বিগত যে সিস্টেমগুলো মানুষ আসলে তাদের জায়গা থেকে গ্রহণ করেনি এবং আগামীতে যেই সিস্টেমগুলো মানুষ চাচ্ছে না সেগুলো স্পষ্ট করা হবে।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker