জাতীয়

ছাত্রসংগঠনগুলোর দূরত্ব বাড়ছে ‘বৈষম্যবিরোধী’দের সঙ্গে!

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। অভ্যুত্থানের চার মাস পর নানা মতপার্থক্যে এই প্ল্যাটফরমের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর দূরত্ব বেড়েছে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা মতবিনিময়সভায় বড় কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের অনুপস্থিতি এবং পরে পৃথক বৈঠক আয়োজনের ঘটনায় এটা আরো স্পষ্ট হয়েছে।ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোর মতামত নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে প্ল্যাটফরমটির বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগও তুলেছেন তারা।গত ২৬ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে সপ্তাহব্যাপী ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালন করে। এই কর্মসূচি শেষে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে গত বুধবার মতবিনিময়সভা ডাকলে তাতে অংশগ্রহণ করেনি বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন।সভায় অংশ না নেওয়ার কারণ হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা নেতারা রক্ষা করতে পারেননি।এ বিষয়ে কথা বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মতবিনিময়সভায় অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই বৈঠকে সব ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠনের আলোচনা হবে বলে পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংগঠনগুলোকে না জানিয়ে বৈঠক স্থগিত করে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। অভ্যুত্থানের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলোকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করছে।বুধবারের সভায় অংশ না নেওয়া ছাত্রসংগঠনগুলো গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বাদ রেখে পৃথক মতবিনিময়সভার আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’সহ ৩১টি ছাত্রসংগঠন অংশগ্রহণ করে।

ওই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ভূমিকার সমালোচনা করেন ছাত্র নেতারা। সভা শেষে সংগঠনগুলোর এক বিবৃতিতে বলা হয়, অভ্যুত্থানে হাজারো জনতার রক্তের ওপরে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহারের কারণে তা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সৃষ্ট জাতীয় ঐক্যে যদি ভাঙনের সৃষ্টি হয় তাহলের এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রয়েছে এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে প্ল্যাটফরমটির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন বলে দাবি করে। আমরা গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের নিপীড়নের শিকার রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার বসেছিলাম। তাই সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ডাকা হয়নি।

‘জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সক্রিয় শিবির’বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সভাগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ৫ আগস্টের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সব কর্মসূচিতে সংগঠনটির সরব উপস্থিতি ছিল। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী যেকোনো আয়োজনে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির মূল্যায়ন জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে প্ল্যাটফরমটি সব ছাত্রসংগঠনের প্ল্যাটফরম ছিল। এই প্ল্যাটফরমের সমন্বয়করা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে—এমন অভিযোগ হয়তো আছে। তারা বিভিন্ন কমিটিও দিয়েছে। এটি তাদের নিজস্ব চিন্তা। ছাত্রসংগঠনগুলো এই প্ল্যাটফরমকে সহায়তা করবে কি না, এগুলোও সংগঠনগুলোর নিজ নিজ সিদ্ধান্ত।’অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ বাম ছাত্রসংগঠনগুলোরঅগতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগে গত ২৬ নভেম্বরের সভা থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা মতবিনিময়সভায় অংশ নেয়নি বাম ছাত্রসংগঠনগুলো।

বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফরমটিকে গুটি কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিচালনা করছে।গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এর পর থেকে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।

৫ আগস্টের আগে যেটি সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বিত প্ল্যাটফরম ছিল সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে চারজনের নেতৃত্বের প্ল্যাটফরম হয়ে গেল। এসব অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে।’

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker