জাতীয়

লুট হওয়া অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষদিন আজ, কাল থেকে অভিযান

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ আজ মঙ্গলবারের (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

গতকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির কাছে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে মঙ্গলবারের (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এ সময়ের মধ্যে জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে ও পরে বিভিন্ন থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট করা হয়। 

এদিকে এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশে আগামীকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়, কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের পরিচয় দিতে হবে। পরিচয় না দিয়ে কোনো অবস্থাতেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যৌথ অভিযানসহ যে কোনো ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানতে হবে।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে সব বাহিনীর সমন্বয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলবে। আজকালের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে।

একটি সূত্র জানায়, গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোর কমিটির বৈঠক হয়েছে। এতে সব বাহিনী ও গোয়েন্দাপ্রধান এবং তাদের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সম্প্রতি থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করার বিষয়ে এতে জোর দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে যারা নির্বিচারে গুলি করে গা-ঢাকা দিয়েছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গুলি করার অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করার কথাও বলা হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য নির্বিচারে গুলি করায় সরাসরি জড়িত এবং পলাতক রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে দেশব্যাপী অভিযান চালানো হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, জেল পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর দেওয়া হবে। 

পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো খুদে বার্তায় জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত লুণ্ঠিত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৮৮০টি। গুলি জব্দ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড, টিয়ার গ্যাসের শেল ২২ হাজার ২০১টি ও সাউন্ড গ্রেনেড ২ হাজার ১৩৯টি।

গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক লোকজনকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময়ে যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দেওয়ার শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, দেশে এখন লোকজনের কাছে বৈধ অস্ত্র রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর হাতে। তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের অনেকেই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন।

এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এ সময়ের মধ্যে অস্ত্র-গুলি জমা না দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker