একাত্তরে বুদ্ধিজীবি ও গণহত্যার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ২ যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন খবরে ওই এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ফাঁসির দাবিতে গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে পৌরশহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের বেড়াডাকুরি গ্রামের মৃত সবুর মাস্টারের ছেলে মনিরুজ্জামান ওরফে কোহিনূও, চাতুটিয়া গ্রামের মৃত শফি উদ্দীনের ছেলে আলমগীর হোসেন তালুকদার।
গোপালপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, ট্রাইবুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা মোতাবেক মনিরুজ্জামান ওরফে কোহিনুরকে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে এবং আলমগীর হোসেনকে গোপালপুর পৌরশহরের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত দু’জনই একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী এবং রাজাকার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। একাত্তর সালের ৩০ জুন রাজাকার মনিরুজ্জামান ওরফে কোহিনূর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সাথে নিয়ে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল বাজারে হামলা চালিয়ে ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্রবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক মুসলিম উদ্দীনকে আটক করে গোপালপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে টানা এক সপ্তাহ অমানুষিক নিযার্তন করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করেন। তার পরিবার শহিদ মুসলিম উদ্দীনের লাশের কোন সন্ধ্যান পায়নি।
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার শহিদ মুসলিম উদ্দীনকে বুদ্ধিজীবি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেন। অপরদিকে, একাত্তর সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার মনিরুজ্জামান ওরফে কোহিনূর ও আলমগীর হোসেন তালুকদার একদল রাজাকার ও আলবদরকে সাথে নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামে হামলা চালান। বর্বর হানাদার বাহিনী আওয়ামী লীগের এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে শতাধিক বাড়িঘরে পুড়িয়ে দেয়ার পর ১৭ জনকে হত্যা করেন। এ গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন এ ২ জন কুখ্যাত রাজাকার।
মামলায় আরো বলা হয়, একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত হওয়ার আগের দিন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে কোহিনূর ঢাকায় আসেন। ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী খান সেনার সাথে মনিরুজ্জামান ওরফে কোহিনূর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেন। পরে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দী ছিলেন। এরপর শিমলা চুক্তি অনুযায়ী মুক্তি পেয়ে তিনি পাকিস্তানী সেনাদের সাথে পাকিস্তান চলে যান। পরে পাকিস্তানী নাগরিক হিসাবে নব্বইয়ের দশকে জাপান চলে যান। ২০০২ সালে কোহিনূর দেশে ফিরেন। তিনি বর্তমানে একজন শিল্পপতি এবং দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা।
অপরদিকে, রাজাকার আলমগীর হোসেন তালুকদার ৭৬ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগদান করেন। পরে গোপালপুর পৌরশহরের সূতী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে ২০২১ সালের নভেম্বরে অবসরে যান।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, মনিরুজ্জামান ওরফে কোহিনূরকে ট্রাইবুনালে হাজির করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়। আর আলমগীর হোসেন তালুকদারকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে শনিবার ট্রাইবুনালে হাজির করা হবে।
এদিকে দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের খবরে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে এসেছে। রাতেই তাদের ফাঁসির দাবিতে গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে পৌরশহরে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে গোপালপুর থানা ব্রীজ চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্র নাথ সরকার বিমলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পৌর মেয়র রকিবুল হক ছানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্বাছ আলী, আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.