জাতীয়

উপদেষ্টা পরিষদ বিবৃতি: নির্বাচন, সংস্কার, বিচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ বিবৃতিতে জানাল, স্বাভাবিক কাজে বাধা এলে সরকার জনগণকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা (একনেক) শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে সরকারের ওপর অর্পিত মূল দায়িত্বগুলো পালনে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হলে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।


প্রধান তিন দায়িত্ব ও আলোচনা

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর শেরেবাংলানগর এলাকায় পরিকল্পনা কমিশনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপদেষ্টারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব—নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার—নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে এবং স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে, এই দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা দেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।


উপদেষ্টা পরিষদের মূল বার্তা:

  • বৃহত্তর ঐক্য: দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।
  • রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য: অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে।
  • গোষ্ঠীস্বার্থ উপেক্ষা: শত বাধার মাঝেও অন্তর্বর্তী সরকার গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এই বৃহত্তর ঐক্য কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, বরং আপামর জনগণের মধ্যেও হওয়া প্রয়োজন বলে বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনবে এবং এরপর জনগণের সামনে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরবে। শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, যা তাদের দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বিবৃতিতে এই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।


জনগণের প্রত্যাশা ও সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

বিবৃতিতে একটি কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে: যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এই অংশটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের ধৈর্যের সীমা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে একটি সতর্কবার্তা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে গঠিত হয়েছিল, যা জনগণের মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যদি সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচারপ্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তোলে, তবে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এর অর্থ হলো, সরকার জনগণের সমর্থনকে মূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে এবং প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে। এই বিবৃতি একদিকে যেমন সরকারের দৃঢ়তা প্রকাশ করে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সরকারের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়।


বৈঠকের প্রেক্ষাপট

শনিবার (২৪ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষ হওয়ার পরই উপদেষ্টা পরিষদের এই অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একনেক সভার পরপরই উপদেষ্টারা রুদ্ধদ্বার কক্ষে বসেন, যা তাদের আলোচনার গুরুত্ব এবং সংবেদনশীলতা বোঝায়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker