ড. ইউনূস পদত্যাগ করছেন না, নিশ্চিত করলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেই থাকছেন।
সম্প্রতি চলমান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ নিশ্চিত করা হয়েছে যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না; বরং তিনি এবং উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য সদস্য অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেই থাকছেন। আজ শনিবার (২৪ মে) পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে এসেছে।
রুদ্ধদ্বার বৈঠক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “প্রধান উপদেষ্টা চলে যাওয়ার কথা বলেননি। তিনি পদত্যাগ করছেন না, আমাদের সঙ্গেই থাকছেন।” তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। তিনি বলেন, “আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।”
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষ হওয়ার পরপরই আজ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ১৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনকক্ষের বাইরে ১৯টি পতাকাবাহী গাড়ি দেখা যায়, যা উপদেষ্টাদের উপস্থিতিরই জানান দিচ্ছিল। এই বৈঠকে উপদেষ্টাদের বাইরে আর কাউকে রাখা হয়নি; একনেক বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনাসচিবসহ সব সরকারি কর্মকর্তাকে এনইসি কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়, যা রুদ্ধদ্বার আলোচনার পরিবেশ নিশ্চিত করে।
উপদেষ্টা পরিষদের উপস্থিতি ও একনেক সভার অর্জন
বৈঠকে উপস্থিত উল্লেখযোগ্য উপদেষ্টাবৃন্দ:
- পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল
- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন
- স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)
- শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান
- খাদ্য এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার
- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
- সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ
- সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
- যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব
এর আগে বেলা ১১টায় একনেক সভা শুরু হয় এবং দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তা শেষ হয়। এই বৈঠকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পগুলো দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা পরিষদের এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ এটি সরকারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
জল্পনা ও পটভূমি: পদত্যাগ গুঞ্জনের আদ্যোপান্ত
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন শুরু হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার থেকে, যখন তিনি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠকটি প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলেছিল এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপদেষ্টাদের সাথে তার গভীর আলোচনা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, ড. ইউনূস পদত্যাগের কথা গুরুত্ব সহকারে ভাবছেন। এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে এবং জনমনে ব্যাপক কৌতূহল ও জল্পনা তৈরি হয়। তবে, গতকাল (শুক্রবার) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই পদত্যাগের খবরকে গুজব বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন যে, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না বলেই তার বিশ্বাস, যা পরিস্থিতিকে কিছুটা শান্ত করতে সাহায্য করে। আজকের বৈঠক এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টার নিশ্চিত বার্তা এই জল্পনার চূড়ান্ত অবসান ঘটাল।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও এর তাৎপর্য
উল্লেখ্য, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এক বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত হয়েছিল। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এই ঐতিহাসিক ঘটনার তিন দিন পর, অর্থাৎ ৮ আগস্ট, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকার গঠনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা এবং দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং জনগনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এই অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ধারাবাহিকতা এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশাকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।