সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ঘিরে থাকলেও, তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশি নাবিকরা হাহাকার করছেন এক ফোঁটা পানির জন্য। খাবারও প্রায় শেষ, আর শীতল বাতাসের তীব্রতার মাঝে তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
কখনও রোদ উঠে, আবার কখনও তাপমাত্রা কমে যায়। কিন্তু, সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। ৫০ জন নাবিকের চোখে দিগন্তের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই নেই।
এই দুর্দশার শুরু হয়েছিল গত বছর ২৯শে ডিসেম্বর, যখন রাশিয়ার ওসলোগা বন্দরে বাংলাদেশের মেঘনা প্রিন্সেস জাহাজটি জিপিএস বিভ্রান্তির কারণে পথ হারিয়ে বিশাল পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
এক মুহূর্তে জাহাজটি কাঁপতে থাকে, তলা ফেটে যায়, আর বরফ শীতল পানির নিচে চলে যায়। প্রোপেলারের সাহায্যের জন্য একের পর এক বার্তা পাঠানো হলেও, একদিন থেকে দুইদিন, এক সপ্তাহ কেটে গেলেও রুশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
এদিকে, শীতের তীব্রতায় নাবিকেরা ঠান্ডায় জমে যাচ্ছেন, বিশুদ্ধ পানি নেই, খাবারও প্রায় শেষ। বাধ্য হয়ে তারা তুষার গলিয়ে পানি পান করেন। প্রতিটি রাত, প্রতিটি মুহূর্ত যেন মৃত্যুর অপেক্ষায় কাটছে। কেউ জানে না, এই বন্দি দশা কতদিন চলবে—দুই সপ্তাহ, এক মাস, ছয় মাস, কিংবা এক বছর?
এছাড়া, গত ২৯শে জানুয়ারি পুয়ের্ত ওরজ বন্দরে একটি দুর্ঘটনায় এক ডুবুরি মারা যান এবং পরিস্থিতি এক নিমিষে বদলে যায়। ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে আটক করে এবং জাহাজে থাকা ২৫ জন নাবিক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের কাছে পানি আর খাবার খুবই কম, এবং প্রশ্ন উঠছে, তারা কি বেঁচে ফিরতে পারবেন?
এখনও কোনো সমাধান মিলেনি। সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রুতির পরও, নাবিকদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের চোখে কেবল একটাই প্রশ্ন—তাদের প্রিয়জনরা কি জীবিত ফিরে আসবেন, নাকি একদিন জাহাজের কোনায় শুকনো হাড়গোড়া পাওয়া যাবে?