ইতিহাস ও ঐতিহ্য

নড়াইলে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি বিলুপ্তপ্রায়

নড়াইলে আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় ও ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বাহন ছিল গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা। বিশেষ করে নড়াইলের  জনপদে কৃষি ফসল বহন ও মানুষ বহনের প্রিয় বাহন ছিল দু-চাকার গরুর গাড়ি।
আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় ও ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে হার মেনে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা বিলুপ্তপ্রায়। আর গরুর গাড়ির সাথে সংপৃক্ততায় হারিয়ে যেতে বসেছে গাড়িয়াল পেশা। গ্রামগঞ্জের একা বেকা মেঠো পথে এখন আর তেমন চোঁখে পড়ে না পূর্বেও সময়কালের অতি প্রয়োজনীয় গরুর গাড়ি।
দেশের গ্রামীন জনপদের মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি বাহনের সরগরম অস্তিত্ব ছিল এবং ছিল সর্বত্র  এই গরুর গাড়ির কদর। বর্তমানে দেশে ডিজিটাল পদ্ধতির ছোঁয়া লাগাতেই গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা বিলুপ্তপ্রায়। গরুর গাড়ি নিয়ে কবি লেখকরা লিখেছেন তাদের কবিতার ভাষায় কতনা কবিতা, শিল্পীরা গেয়েছেন কতই না ভাওয়াইয়া গান।
ভাওয়াইয়া গানের মধ্যে অন্যতম গান হল ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রবো আমি পন্থের দিকে চাইয়ারে…….। বর্তমানে গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা এখন এসব বাহন করে শুধুমাত্র রূপকথার গল্পমাত্র এবং বিলুপ্ত হয়ে স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বইয়ের পাতায়। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না।
আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।আবার অনেক শহরে শিশু গরুর গাড়ি দেখলে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করে গরুর গাড়ি সম্পর্কে। যুগ যুগ ধরে কৃষকের কৃষি ফসল বপন ও বহনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল গরুর গাড়ি।
গরু গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার বিশেষ যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। দুই যুগ আগে গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না।
বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন বাহন। বরপক্ষের লোকজন বরযাত্রী ও ডুলিবিবিরা বিয়ের জন্য ১০-১২টি গরুর গাড়ির ছাওনি (টাপর) সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করত। রাস্তাঘাটে গরুর গাড়ি থেকে পটকাও ফুটাত। বিয়ে এবং অন্য কোন উৎসবে গরুর গাড়ি ছাড়া পূর্ণতা পেতো না। হাতে গোনা দু’একটা গাড়ি দেখা যায় গ্রামের মেঠে পথে তাও জরাজীর্ন অবস্থায়। তাছাড়া যেন চোঁখেই পড়ে না এই গরুর গাড়িগুলো।
কিন্তুশহরের ছেলে মেয়েরাতো দুরে থাক গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ির এই বাহনের সাথে পরিচিত না খুব একটা। আগে অনেকেরি এই গাড়ি গুলো ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল কিন্তু এখন গরুর গাড়ি চলে না। যে সব পরিবারে গরুগাড়ি ছিল, তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে কখনো জৈব সার তথা গোবরের সার, কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই-জোয়াল নিয়ে যেত মাঠে। বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ।
মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন।
রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরুর গাড়িও একটি পরিবেশবান্ধব যান। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। শব্দ দূষণ নেই। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এসব কিছুই এই যানে ব্যবহার হয় না। এই গরুর গাড়ি ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও নেই। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুরগাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে।গ্রামের বয়স্ক গাড়িয়াল জাহাঙ্গীর আলম ও এমামুল হক জুয়েল বলেন, আগে আমাদের বাপ-দাদারা গরুর গাড়ি চালিয়ে আমাদের সংসার চালাতো।
কিন্তু এখন গরুর গাড়িতে আর কেউ চলতে চাইনা। তাই অটো ভ্যান ও ইজিবাইক চালিয়ে গাড়িয়ালরা তাদের জীবন জিবীকা নির্বাহ করছে। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন গরুর গাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্যগুলোকে আমাদের মাঝে ধরে রাখতে আবারও গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশাকে টিকেয়ে রাখতে সরকারের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই উত্তম। বেতবাড়িয়া গ্রমের সুবোল মন্ডল বলেন, এখনো গ্রামবাংলার জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের প্রিয় বাহন দুই-চাকার গরুর গাড়ি থাকলেও আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়া আর ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে হার মেনে বিলুপ্তপ্রায় এ পেশাটি।
মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না, ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। গরুর গাড়ি একটি পরিবেশবান্ধব যানবহন। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। শব্দ দূষণ নেই।
তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ এসব কিছুই এই যানে ব্যবহার হয় না। এই গরুর গাড়ি ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও নেই। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে।
অনিল লস্কর বলেন, গ্রামবাংলার এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গরুর গাড়ি। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটছে, হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, যা আজ বিলুপ্তির পথে।
গরুর গাড়ি হলো দুই চাকাবিশিষ্ট যান বিশেষ, যা গরু বা বলদ টেনে নিয়ে যায়। একসময় কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। মালপত্র পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন।
দেশের উন্নয়নের ছোঁয়া পাওয়ার টিলার আসার পর গরুর গাড়ী ও গাড়িয়াল পেশা আমাদের হারিয়ে যাচ্ছে। এটা পরিবেশ বান্ধব। তবে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে এবং এই বিষয়ে আমাদের এলাকার ধনী কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker