বাংলা ১৩৪৪ সালের ১৫ শ্রাবন (১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই রবীন্দ্র নাথ পতিসর থেকে শেষ বারের মতো চলে যান। বিদায়ের শেষ দিকে তিনি কালীগ্রাম পরগনার হতদরিদ্র অসহায় মানুষকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ছেলে রথীন্দ্র ও পরগনার নামানুসারে পতিসরে প্রতিষ্ঠা করেন কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন। তখন থেকেই বিদ্যালয়ের মাটির ঘরগুলোতে নিয়মিত পাঠদান চলছিল। বর্তমানে মাটির ঘরগুলোকিছুটা নর বড়েহয়ে পড়লেও বিশ্বকবির স্মৃতি ঠিকই বহন করের চলছে। এরই মধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে কয়েকটি মাটির ঘর। ইনস্টিটিউটটি এখনো সরকারী করণ হয়নি।
জানা যায়, স্কুল পরিচালনা কমিটি রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউটের প্রাচীর মাটির ভবন গুলোর গুরুত্ব না বুঝে মাটির ঘরটি ভেঙ্গে ফেলে। এর আগেও এভাবে ভবন ভবন উন্নয়নের নামে মাটির ঘর ভেঙ্গে সেখানে নির্মান করা হয় একটি দালান। এ ব্যাপারে সে সময় কথা হয়েছিল প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক বদরুল আলমের সাথে তিনি বলেছিলেন রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের নয়। তবুও বিষয়টি আমরা দেখবো।
এদিকে পুরনো এ মাটির ঘরটির গুরত্বসম্পর্কে রবীন্দ্র গবেষক প্রাবন্ধিক আহম্মদ রফিক জানান, নিঃসন্দেহে রথীন্দ্র নাথ ইনস্টিটিউশনের মাটির ঘরটি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির ধারক ও বাহক।
বাঙালি জাতির গৌরবময় ইতিহাসটি ভেঙ্গে না ফেলে সংরক্ষণ করা উচিৎ ছিল। রবীন্দ্র গবেষক ও প্রত্নতত্ববিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফোকালের বিভাগের অধ্যাপক ড: সাইফুদ্দিন টৌধুরী বলেন, আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল ইতিহাস, ঐতিহ্য রক্ষায় রবীন্দ্র নাথের মাটির ঘরটি সংরক্ষণের। বিষয়টি আমার কাছে পীরাদায়ক। রবীন্দ্র নাথের সৃষ্টি মাটির ঘর ভেঙ্গে ফেলায় তখন রবীন্দ্রগবেষক ও সুশীল সমাজের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। ইনস্টিটিউটের মাটির ঘর গুলো যখন একের পর এক ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে তখন দৈবক্রমে টিকে গেছে দুটিদীর্ঘ মাটির দেওয়ালের ওপর টালি নির্মিত ভবন। এটি এখন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউটের একমাত্র পূররো স্মৃতি।
কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষক মহিউদ্দিন বলেন, আমি ওই বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছি। আমি ভালো ভাবেই জানি দুদিকেই লম্বালম্বিঘর ছিল তবে মাঝ খানে প্রবলঝড়ে ঘরগুলোর ক্ষতি হয়েছিল। পরে মেরামতকরা হয়েছে।
রবীন্দ্র গবেষণাধর্মী বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে জানা যায়, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের জমিদারি কালীগ্রাম পরগনার বড় পরগনীকাশেম সরদার ছিলেন রবী ঠাকুরের অত্যান্ত প্রীতিভাজন। তার ছেলে সাকেম সরদারর রথীন্দ্র নাথ ইনন্সিটিউট নির্মানের সময় এক বিঘা জমি দান করেছিলেন।
রথীন্দ্র নাথ ইনন্সিটিউটের শিক্ষার্থী জান্নাতুন সাদিয়া ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মায়শা ফারিয়া, সাগরিকা সাহা ও আয়শা সিদ্দিকা মিম বলেন, আমরা খুব কষ্টে পড়া শুনা করছি পর্যাপ্ত পরিমান ক্লাশ রুম নাই, ক্লাশ রুমে বৈদ্যিুতিক ফ্যান নাই, খাবার বিষুদ্ধ পানি নেই, বিদ্যালয়ে ইংরাজী শিক্ষক, গণিতশিক্ষক নাই, অনেক অসুবিধার মধ্যে আমাদের লেখাপড়া করতে হয়। তাই আমাদের দাবি উল্লেখিত দাবিগুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমাধান করবে এবং পড়াশুনার পরিবেশ ফিরে দিবেন।
এবিষয়ে কালীগ্রাম রথীন্দ্র নাথ ইনস্টিটিউশন এর প্রধান শিক্ষক মো: আহসান হাবিব বলেন, বর্তমানে আমার বিদ্যালয়ে একটি মাত্র বিল্ডিং আর কবিগুরু রবীনাথ ঠাকুরের স্মৃতি নিজ হাতে গড়া দুইটি মাটির দেওয়াল সেই সময়ের টালির দিয়ে তৈরি ঘর খুব জরাজিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে ক্লাশ করা হয়। তাই এই কালীগ্রাম রথীন্দ্র নাথ ইনস্টিটিউট কে জাতিয় করণ করে বিল্ডিং বরাদ্ধ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে জোর দাবি জানাই।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.