Site icon MIssion 90 News

অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, ‘জীবনের মূল্য’ দুই লাখ ২০ হাজার

রাজধানীতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং

কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্টাফদের অবহেলার কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরবানু (৪৮) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর ডিসি রোড এলাকায় অবস্থিত ‘কুমিল্লা সেবা হাসপাতালে’।

এ ঘটনার বিক্ষুব্ধ হয়ে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালটিতে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মৃত নুরবানু (৪৮) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কাবিলা মনশাসন এলাকার মৃত আব্দুল হকের স্ত্রী।

এদিকে, এ ঘটনায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর সুমন ওই নারীর পরিবারের সদ্যসদের সঙ্গে কথা বলে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

মৃতের মেয়ে তাসলিমা আক্তার জানান, নুরবানুর জরায়ুতে সমস্যা নিয়ে গত রবিবার (৩০ জুলাই) বিকেলে সেবা হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসক রুমানা পারভিন একই দিনে সন্ধ্যায় হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নুরবানুর জরায়ুর অপারেশন করে অবজারভেশনে রাখেন। অপারেশন করার সময় নুরবানুর শরীরে ৪ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।

পরদিন সোমবার বিকেলে অন্য একটি রোগীর অপারেশন করা হলে নুরবানুকে হাঁটিয়ে হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে হাসপাতালের স্টাফরা। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই নুরবানুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই নুরবানুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। হাসপাতালটিতে আইসিসিইউ, সিসিইউ না থাকায় সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে সোমবার রাত ৮টার দিকে মারা যান তিনি।

এদিকে, এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে ভাঙচুর করেন রোগীর স্বজনরা। এছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের শান্ত করতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর সুমন মৃতের পরিবারকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে চাইলে তারা রাতে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

নুরবানুর মেয়ের জামাই শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে আমাদের অনুরোধ করে এ ব্যাপারে কাউকে না জানানোর জন্য। বিনিময়ে আমাদের ২ লাখ ২০ হাজার দেবে তারা।

পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে আমাদের ২০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ২ লাখ টাকার খালি চেক মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দেবে বলে জানায়। তবে চেক দিলেও টাকা দেবে ১ মাসের মধ্যে দুই কিস্তিতে ১ লাখ করে। পরে আমরা মরদেহ নিয়ে বাসায় চলে আসি।

মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে সেবা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম না। রোগীর অপারেশন করেছে অন কলে আসা চিকিৎসক রুমানা পারভিন। অপারেশনের পর রোগী ভালো ছিল। একদিন পর তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নামানোর পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর মারা যান। এ ঘটনার পর নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। সোমবার রাতে নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আর বাকি টাকা এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। 

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়মনীতি না মেনেই চলছে কথিত সেবা প্রদান। প্রায়ই এসব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাসিম আক্তার বলেন, সেবা হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর এমন কোনো কিছু আমি জানি না। এছাড়া এমন কোনো অভিযোগও আমরা পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

Exit mobile version