বিনোদন

পরীমনির মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদের ঝড়, ছেয়ে গেছে ফেসবুক

সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে মিশে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে শোবিজের পছন্দের তারকাদের নিত্য-নতুন খোঁজ-খবর রাখতে পারেন ভক্তকূল। রূপালী জগতের তেমন এক আলোচিত তারকা নাম পরীমনি।যার ফেসবুকে মিলিয়ন-মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে।সাদামাটা ছবি আপলোড করলেও হুমড়ি খেয়ে পড়ত পরীমনির অনুসারীরা। আবার কমেন্ট বক্সে উঠত মন্তব্যের ঝড়।

সিনেমার ঝলমলে জীবনের বাইরে এই নায়িকা একজন সুন্দর মনের মানুষও। তার মানবিকবোধ প্রশংসিত হয়েছে বারংবার। অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে অনন্যা হিসেবে জাহির করেছেন।

পরীমণি ক্যারিয়ার শুরু করেছেন সবে অর্ধ যুগ। এই অল্প সময়েই তিনি অর্থ-পরিচিতি দুটোই কামিয়েছেন। তবে অর্জনের সবটা নিজের কাছে রেখে দেননি। বরং অন্যদের মাঝেও বিলিয়ে দিয়েছেন। কখনো প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে ছুটে গিয়েছেন, সহায়তা দিয়েছেন, আবার কখনো এফডিসিতে কোরবানি দিয়ে অসহায় কলাকুশলীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

পরীমনিকে এখন আলোচনা সবখানে। ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, বোট ক্লাব, আটক এবং মাদক মামলাসহ নানা বিষয় এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও কমেনি তার অনুসারীর সংখ্যা। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এর সংখ্যা এখন আকাশমুখী।

গ্রেফতার হওয়ার পর পরীমণিকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিও পরীমণির সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করে।তবে ধীরে ধীরে পরীর জন্য কথা বলছেন অনেকে। চাচ্ছেন ন্যায় বিচার। ‘জাস্টিস ফর পরীমণি’ লেখা পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার করে প্রতিবাদ করছেন অনেকেই। আর পরীমনির মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদের ঝড়, ছেয়ে গেছে ফেসবুক।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব এবং জনপ্রিয় নির্মাতা শাহীন সুমন তার ফেসবুক সম্প্রতি,পরীমনিকে নিয়ে লেখেন,সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের পরি প্রেক্ষিতে সোজা সাপটা বলি , পরিমনী ন্যায় বিচার পাক, নিজের ভুল ত্রুটি এবং অতীত কর্ম কান্ড সংশোধন , পরিমার্জন করে পরিশোধিত হয়ে আমাদের  মাঝে ফিরে আসুক, ইন্ডাস্ট্রির দরজা তার জন্য খোলা রইল।

পরিচালক শাহাদাত হোসেন লিটন তার ফেসবুক দেয়ালে লেখেন,পরিমনি অপরাধী ? জানিনা ,পরীমনি নির্দোষ ? তাও জানি না ,শুধু জানি পরীমনি নিঃস্ব চলচ্চিত্র শিল্পের এক টুকরো আশার আলো l

চিত্র-পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ফেসবুক ওয়ালে এমন একটি পোস্টার দেখা যায়। এর আগে দেশের প্রখ্যাত গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদ পরীমণিকে ‘টানাহ্যাঁচড়া’ না করার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘যেটুকু অন্যায় সে করেছে তার থেকে অনেক অনেক বেশি শাস্তি সে পেয়ে গেছে। এবার একটু দয়া করেন। আর যদি এখনও মনে হয় তার শাস্তি হয় নাই, তবে তিন্নির মতো কাচপুর ব্রিজের ওপর থেকে বস্তায় বেঁধে ছুড়ে ফেলে দেন অথবা তাকে মাটিতে অর্ধেক পুতে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলেন। তাও প্রতিদিন এমনভাবে টানাহ্যাঁচড়া করে এমন অপমান একজন সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে আর নিতে পারছি না।’

পরিচালক গাজী মাহাবুব তার ফেসবুকে লিখেছেন,শিল্পী সমিতি কিন্তু শিল্পী সৃষ্টি করেনা।শিল্পী সৃষ্টি করে পরিচালক সমিতি।পরীমনি ইস্যুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ভূমিকা আশা করি।

ছবির পরিচালক রাশিদ পলাশ বিদেশি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, “পরীমণি আমাদের ‘প্রীতিলতা’-র প্রধান চরিত্র। ১৭ অগস্ট থেকে চট্টগ্রামে আমাদের টানা কুড়ি দিন শ্যুটিং ছিল। আমাদের শ্যুটিং এখন অনিশ্চিত। এই করোনাকালে আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একটা বড় ক্ষতির মুখে পড়ল। বিচার চলুক, কিন্তু আমাদের দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি দ্রুত আমাদের প্রীতিলতাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক। আমরা ‘টিম প্রীতিলতা’ অভিনেত্রী পরীমণির মুক্তি চাই।”

এদিকে পরীমণির জন্য প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আহ্বান করেছেন শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি আসলে ২০ জন সাহসী মানুষ চাই শনিবার প্রেসক্লাবের সামনে, যারা বলবে মেয়েটার প্রতি অন্যায় হচ্ছে…!’

কবি জগদীশ বড়ুয়া পার্থ বৃহস্পতিবার পরীমণির মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছেন প্লেসক্লাবের সামনে। সেই মানববন্ধনের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।

লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতি লিখেছেন, ‘সে (পরী) প্রতীক সেই জঘন্য সমাজব্যবস্থার যেখানে মদ খাইলে চরিত্র নিয়া টানাটানি পড়ে, কিন্তু ঘুষ খাইলে কেউ চরিত্রের প্রশ্নও তোলে না!

পরীমণি বোকা, ভীত, অনাথ, দোষী বা নির্দোষ যাইই হোন, বেশিরভাগ বাঙালির মনের ভাষা তার কারণেই নতুন করে আবিষ্কার করা গেছে। আবিষ্কার করা গেছে ধর্ম মতে পাপকে কেমন করে আইনের সাথে মিলিয়ে অপরাধের তকমা দেওয়া হয়।

যে সমাজের লোক এখনো পাপ আর অপরাধ আলাদা করতে শেখে নাই, তারা বে*শ্যা হইলে নারীকে সম্মান করতে পারবে- সেই আশা করা কি ঠিক হবে? আপনিই বলেন?’

লেখক ও নাট্যনির্মাতা মোস্তফা মনন লিখেছেন, ‘পরীমণির ঘটনা এবং আমজাদ হোসেনের ছোটগল্প কাল সকালে-এর অনেক মিল আছে। গল্পে দেখতে পাই, এক পাগলি প্রেগন্যান্ট হয়, পরিবারের সকলের চাপাচাপিতে সে বলে দেবে কে দায়ী এবং এই ঘটনা বলবে কাল সকালে। এই খবর সবাই জেনে যায়। এলাকাবাসী, পাশের গ্রামের মানুষ। সন্ধ্যার পর এক এক করে আসতে থাকে পাগলির কাছে, মুদি দোকানদার, স্কুল মাস্টার, পাড়ার বখাটে, মেম্বার। তারা একে একে করে গোপনে আসে, আর নানান উপহার দিয়ে বলে, আমার কথা বলিস না। শেষের দিকে গল্পের একটা করুণ পরিণতি হয়। পাগলিকে একজন বিশ্বাস করতে পারে না। সে মনে করে, পাগলি যদি সকালে বলে দেয়! তাই তাকে পেটে ছুরি মারে, পাগলি মারা যায়। কাল সকালে পাগলি বলতে পারেনা তার এই অবস্থার জন্য কে দায়ী।  পরীমণির ঘটনার সাথে এই অনেক গল্পের মিল। পরীমণি না জানি কার নাম বলে দেয়! কারা পরীমণির বাসায় যেত! সমাজের উচ্চস্তরের মানুষগুলো সংকটে আছে এবং মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। তারা পরীমণিকে করোনার চেয়ে বেশি ভয় পায়। এই জন্য জীবন্ত/মুক্ত পরীমণি তাদের জন্য হুমকি।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও সংগঠক বেলায়াত হোসেন মামুন লিখেছেন, ‘প্রতিহিংসার চেহারা খুব নোংরাই হয়। পরীমণির ক্ষেত্রে তা উৎকটভাবে দেখা যাচ্ছে। মদ ও মাদক এখানে অজুহাত মাত্র। গন্তব্য আদতে শিক্ষা দেয়া। জেদ এখানে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা।

পরীমণি ইস্যু হলেও দেখবার বিষয় পরী নয়। একজন নারীর সাথে কী কী ঘটছে, ঘটতে পারে তার একটা বেটার উদাহরণ চলমান পরিস্থিতি। মেরুদণ্ড সোজা করে একজন মানুষের অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তার পক্ষে দাঁড়ানোর সাহস না থাকাটা অত্যন্ত তুচ্ছ অস্তিত্বের লক্ষণ। এই তুচ্ছতা এতটাই তুচ্ছ যে তা কীটের মর্যাদারও নিচেই থাকে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ। মাথাপঁচা কাতারে কাতারে লোকজনের এই কাণ্ডজ্ঞানটুকু না থাকাটা আমাদের সমাজের জন্য ভয়ানক বিপদের ব্যাপার।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জাকির মজুমদার তার ফেসবুকে পরীমনিকে নিয়ে লিখেছেন,যারা বলতে চান মেয়েটার প্রতি অন্যায় হচ্ছে তারা চলে আসুন ১৪ আগস্ট শনিবার বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাবের সামনে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker