বছরের প্রথম দিন বই দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা
ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহ শেষ। এই সময় উপজেলা পর্যায়ে ৪০ শতাংশ বই চলে যায়। তবে এবার নবম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণে দরপত্রই সম্পন্ন হয়নি। দশম শ্রেণির দরপত্র শেষ হলেও বাকি একাধিক কার্যক্রম। একই অবস্থা অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রেও। ছাপা শুরু হয়নি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইও। এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে কাগজ সংকট। তাদের অভিযোগ, কাগজ মিলগুলোকে অগ্রিম টাকা দিয়েও কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির এক তারিখ প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই চলে যাবে। তবে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
দরপত্র আহ্বান থেকে বই ছাপাখানায় যেতে হয় একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সেই নিয়মের চক্করে বই মুদ্রণে যেতেও সময় লাগছে বেশি। প্রতিবছর এই প্রক্রিয়া বছরের মাঝামাঝি শুরু হলেও এবার নানা কারণে শেষ দিকে শুরু হয়। যার ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সময় যে বেশি লাগবে তা ব্যবসায়ী বুঝলেও তবে বুঝতে চাচ্ছে না এনসিটিবি এমনটাই অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়, পাঠ্যবই ছাপায় যুক্ত হতে ব্যবসায়ীরা প্রথমে দরপত্রে অংশ নেয়। যিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হন তার দরপত্র মূল্যায়ন করে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যাচাই-বাছাই শেষে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর সেটি যায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রয়োজন হয় সম্মতির। এরপর নোটিফিকেশন এওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়। শুরু হয় চুক্তির মাধ্যমে কাজ। তবে সেখানেও একটি জটিলতা রয়েছ। ব্যবসায়ীরা জানান, নোয়া পাওয়ার পর এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। ১৪ দিনের মধ্যে যতটাকার কাজ পেয়েছে তার পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) হিসেবে জমা দিতে হয় কাজের ১০ শতাংশ অর্থ। চুক্তির জন্য ২৮ দিন সময় পান তারা। পিপিআরের শর্ত অনুযায়ী চুক্তির পর ৪০ দিন সময় পান মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যেই বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুস্তক ব্যবসায়ী অভিযোগের সুরে জানান, বই ছাপানোর কাজ জুন মাস থেকে শুরু হলেও এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও কারিকুলাম সংশোধনের কারণে অনেক দেরি হয়েছে। এসব কারণে দরপত্র শুরু করতেই সময় নেয় এনসিটিবি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। এছাড়াও এনসিটিবিতে সব নতুন কর্মকর্তা আসায় তাদের কাজ বুঝতে সময় লাগছে। যেকারণে পুরো প্রক্রিয়ার ওপর এর একটি প্রভাব পড়েছে। এবছর এখনো বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে কোন ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগ দেয়নি বোর্ড। এর ফলে কাগজের মান নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ নিয়েও ভুগতে হচ্ছে। এনসিটিবি কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে ছাপার কাগজ চেয়েছেন। সেটি কোন ল্যাবে পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেবেন বলে জানা গেছে। এসব একাধিক কারণ দ্রুত বই ছাপায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।