‘তৌহিদী জনতা’র নামে আতঙ্ক: ধর্ম না ধোঁকা?
ধর্মীয় আবেগ ও মূল্যবোধকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির তথাকথিত ‘তৌহিদী জনতা’ দেশব্যাপী উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। পর্যটন কেন্দ্রে হামলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করা এবং সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার এই চর্চা ইসলামের পরিপন্থী এবং সমাজের জন্য উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন জীবন আহমেদ রাব্বি।
ধর্মীয় আবেগ ও মূল্যবোধ আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে ইসলাম আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তবে, যখন ইসলামের নাম ব্যবহার করে জনমতকে উত্তপ্ত করা হয়, গণ-উৎপাতে মব সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়, তখন সেটি শুধু ইসলামকে নয়, গোটা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
‘তৌহিদী জনতা’র নামে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি:
গত ৫ই আগস্টের পর থেকে একশ্রেণির তথাকথিত ‘তৌহিদী জনতা’ এবং তাদের মদদপুষ্ট কিছু আলেম ইসলামকে ঢাল করে যেভাবে দেশব্যাপী উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইসলামের দোহাই দিয়ে রাস্তায় নেমে আসা, পর্যটন কেন্দ্রে হামলার হুমকি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করা, এবং সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার এই চর্চা মোটেই ইসলামসম্মত নয়।
পর্যটন ও শিল্পের উপর আঘাত:
সম্প্রতি সিলেটের একটি পর্যটন এলাকায় ধর্মীয় নামে ‘দর্শনার্থীদের নিষিদ্ধ’ ঘোষণার মতো ঘটনা ঘটেছে। এটি কেবল অবৈধ নয়, একধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনও বটে। পর্যটন একটি দেশের অর্থনীতির অংশ, মানুষের বিনোদনের অধিকারও সাংবিধানিক। ইসলাম কখনোই মানুষের স্বাভাবিক ও বৈধ আনন্দকে নিষিদ্ধ করে না। বরং ইসলাম তো সৌন্দর্য, ভারসাম্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধর্ম।
কালিহাতীর আউলিয়াবাদে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া, তার আগে উত্তেজনা তৈরি করে হল কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করা, এসব কর্মকাণ্ড কোনো আলেমে দীনের কাজ হতে পারে না। এটা স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি অপসংস্কৃতি, যেখানে ‘তৌহিদী জনতা’র নামে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিকে জিম্মি করা হচ্ছে।
ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা বনাম বিকৃত ব্যাখ্যা:
ইসলাম কখনো বিশৃঙ্খলার ধর্ম নয়। রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, প্রতিশোধ নয়। তিনি অন্যের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, সহনশীলতা ও যুক্তিবাদ দিয়েই দাওয়াত দিয়েছেন।
এই তথাকথিত আলেম সমাজ যারা জনগণকে উসকাচ্ছে, তারা ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তারা জনসাধারণের মধ্যে ভয়, বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ ছড়াচ্ছে যার দায় ভবিষ্যতে ইসলামকেই বহন করতে হবে।
সচেতনতা ও প্রতিরোধের আহ্বান:
এখন সময় এসেছে আমাদের সজাগ হওয়ার। ইসলামের নামে যদি কেউ রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে আলেম সমাজের ভেতর থেকেই প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। যারা সত্যিকার আলেম, তারা জানেন ভয় দেখিয়ে, সিনেমা বন্ধ করে বা পর্যটন নিষিদ্ধ করে ইসলাম টিকবে না। ইসলাম টিকে আছে তার সৌন্দর্য, সত্য, জ্ঞান ও উদারতার গুণে।
পরিশেষে, আসুন, ইসলামকে রাজনীতির ঢাল নয়, মানবতার দীপ্ত মশাল হিসেবে গড়ে তুলি। জনতা যেন আর কোনোদিন ‘তৌহিদী’ নামে প্রতারিত না হয়।
লিখেছেন: জীবন আহমেদ রাব্বি, ১৩ জুন ২০২৫