লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের এমপি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল এসেছে মাত্র ৩৭ টাকা। গত (এপ্রিল থেকে জুলাই) চার মাসধরে প্রতিমাসে ৩৭টাকা করে বিল প্রস্তুত করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী (নেসকো)। এছাড়াও ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৩২ টাকা। কোন মাসে ৭২ টাকা আবার কোন মাসে ৫২ টাকা, ৬৫ টাকা, ১১১ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ একটি বিল ২৪০৮ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগষ্ট মাসে। প্রায় চার বছরে মোট বিদ্যুত বিল দেখানো হয়েছে ১১ হাজার ৬২০ টাকা। আর সে বিদ্যুৎ বিল এখনো বকেয়া রয়েছে।
অপরদিকে স্বজনপ্রীতি করে নেসকোর এমন বিদ্যুৎ বিলেও মন্ত্রী, মন্ত্রীপুত্র, মন্ত্রীর ভাই ও প্রয়াত বাবার নামের মিটারে এ পর্যন্ত প্রায় নয় লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল অপরিশোধিত রয়েছে।
নেসকো থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানায়, মন্ত্রীর নামে একটি সেচ কানেকশন রয়েছে। প্রায় চার বছরে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা। ওই বিলটিও বকেয়া রয়েছে। এদিকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাস পযর্ন্ত গড়ে প্রতিমাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকার বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাই মাসে শুন্য বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে শুন্য বিল দেখা হয়েছে। এবছর এপ্রিল মাস বিল দেখানো হয়েছে ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পযর্ন্ত প্রতিমাসে বিল দেখানো হয়েছে ১৮০ টাকা।
মন্ত্রীর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ একজন কলেজ শিক্ষক ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নেসকোর একজন আবাসিক গ্রাহক। তার বাড়িতে ব্যবহৃত মাসিক বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৭২ টাকা, কোন কোন মাসে ১১১ টাকা, ১৫১ টাকা, ১৮৯ টাকা, ২২৯ টাকা ও ৫১২ টাকা। শুধু চলতি বছর জুলাই মাসে সর্বোচ্চ বিল ১৩,৫৬১ টাকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গেল প্রায় চার বছরে মোট বিল দেখানো হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা। কিন্তু এসব বিল এখনো বকেয়া রয়েছে।
এদিকে মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর একটি বানিজ্যিক কানেকশনে গত প্রায় চার বছরে বিল বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ১১৩ টাকা। তার নামে একটি সেচ পাম্পের কানেকশণ রয়েছে। সেখানে গত চার বছর ধরে বিল বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১১টাকা। তার বাবা মৃত করিম উদ্দিন আহমেদের নামে একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এ সংযোগটি ব্যবহার করছেন তিনি। তবে এ সংযোগে মাসিক বিল দেখানো হয়েছে ৬৩ টাকা, ১৭২টাকা, ২৯৪ টাকা, ২৮০ টাকা। সর্বোচ্চ বিল ৪৯৬ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগষ্ট, সেপ্টম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। গত চার বছরে মোট বিল দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৭ টাকা। এখনো বকয়ো রয়েছে এসব বিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ, ফ্যানসহ সকল ধরনের ইলেকিট্রক পণ্য ব্যবহৃত হয় মন্ত্রীর বাসা বাড়িতে এবং তার ছেলে ও তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে। তাদের সেচ পাম্প থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমানে জমিতে ধান ও ভুট্টা চাষ করতে পানি সরবরাহ করা হয়। তারপরেও তাদের বিদ্যুৎ বিল শত টাকার নিচে আসে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের।
এ বিষয়ে মন্ত্রীপুত্র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি ব্যবস্থাপক দেখাশোনা করেন। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের টাকা দেওয়ার কথা। সেটা দেওয়া হয়েছে কি না তিনি ভালো বলতে পারবেন।
বিষয়টিকে নেসকোর দুর্বলতা হিসেবে মন্তব্য করে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি কাশেম আলী বলেন, সাধারণ গ্রাহকদের বেলায় দুই–তিন মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ নানা কিছু করে নেসকো। মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে তিন বছর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার পরও নেসকোর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, অনেক গ্রাহকের বিল বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বিল আদায়ে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছেন। বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কোন গাফিলতি করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে তারা খতিয়ে দেখবেন।
নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করতে কেন এতো অসঙ্গতি হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত খোঁজ নিবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এসব বিলের বিষয় গুলো তিনি খতিয়ে দেখবেন। “আগামি সপ্তাহে তিনি নিজেই কালীগঞ্জ অফিস পরিদর্শন করতে যাবেন বলেও জানান তিনি”।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.