নওগাঁ

নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম, মজুতবিরোধী অভিযানের দাবি

ধান চালে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও বেড়েছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালে প্রকারভেদে বেড়েছে ১-৩ টাকা। খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষেরা। চালের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনের মজুতবিরোধী অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ডলার রেট বৃদ্ধি এবং বড় কোম্পানিগুলোর ধান মজুত করে রাখার কারণে পাইকারি বাজারে চালের দাম ২-৪ টাকা করে বেড়েছে। চালের দাম বাড়ায় কমেছে বেচাকেনা। 

নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৩-৫৪ টাকা, জিরাশাইল ৭০-৭২ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬৯-৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। দুই সপ্তাহ আগে এই মোকামে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫১-৫২ টাকা, জিরাশাইল ৬৭-৬৮ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬৬-৬৭ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।

অপরদিকে পৌর চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা, জিরাশাইল ৭০-৭৪ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭২-৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দুই  সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৬-৫৮ টাকা, জিরাশাইল ৬৮-৭০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০-৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।

নওগাঁ পৌর চাল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ঘোষ ট্রেডার্সের প্রোপাইটার মহাদেব ঘোষ বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বেচাকেনা একদমই নেই। ১০-১২ দিন আগে কাটারি চালের ৫০ কেজি বস্তা কিনছি ৩৪০০-৩৫০০ করে। এখন সেই বস্তা কিনতে হচ্ছে ৩৮০০-৩৯০০ করে। বাজরেও কোনো ক্রেতা নেই। চালও তেমন বিক্রি হচ্ছে না। মিলারদের যোগসাজশে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মা লক্ষ্মী ভান্ডারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী উত্তম সরকার বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে চালের দাম বেশি। প্রায় সব ধরনের চালে কেজিতে ২-৪ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে এখন। বস্তা কিনতেই হচ্ছে বেশি দামে যার জন্য বিক্রিও বেশি দামেই করতে হচ্ছে। কিছু মিলাররা সিন্ডিকেট করে চাল মজুত করে রাখছে। মিলগুলোতে অভিযান চালালে চালের দাম কিছুটা কমে আসবে। 

নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল ব্যাবসায়ী মেসার্স সততা রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, এ বছর ধানের উৎপাদন কিছুটা কম। আবার ধানের দামও অনেক বেশি। যার কারণে চালের দাম কিছুটা বাড়তি। গত দুই সপ্তাহে সব ধরনের চালে ২-৪ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। বড় কোম্পানি এবং বড় মিলাররা এখন চাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ধান কিনে স্টকে রাখছে এবং ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়ে বিক্রি করছে। সরকারের নিয়ম আছে তিন মাসের বেশি ধান কিনে স্টকে রাখতে পারবে না। গত কয়েক মাস থেকে স্টক বিরোধী অভিযানগুলো আর পরিচালনা হচ্ছে না। যার জন্য বাজার অস্থিতিশীল। বাজার মনিটরিং বাড়ানো গেলে চাল বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। 

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বছর ধানের উৎপাদন তুলনামূলক কম হয়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিদেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিলেও সেটিও কার্যকর হচ্ছে না। ডলার রেট বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশগুলো সেভাবে আমাদের ওপর ভরসা করতে পারছে না। যার জন্য ব্যবসা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। শতভাগ মূল্য পরিশোধ ছাড়া বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা যাচ্ছে না। এই কারণে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker