নওগাঁ

ঘড়ি ছাড়াই হাতের দিকে তাকিয়েই সময় বলে দেন নওগাঁর ইয়াছিন

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। ঘড়ি ছাড়াই হাতের দিকে তাকিয়েই প্রকৃত সময় বলে দিতে পারেন ৭৫ বছর বয়সী ইয়াছিন আলী। সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা কিংবা রাতে যে কোন সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলে দেন, এখন সময় কত! তার বলা সময় হুবহু ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে মিলে যায়।

ইয়াছিন আলীর বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার রাতোয়াল গ্রামে। এখন তিনি সবার কাছে ঘড়ি ইয়াছিন হিসেবে পরিচিত। ৭৫ বছর বয়সেও ইয়াছিন আলী সাইকেল চালিয়ে কাঁচা সবজির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘড়ি ছাড়া সময় বলতে পারায় তার নামে একটি গ্রামের নামও হয়েছে। সেই গ্রামের নাম ইয়াছিনপুর গ্রাম।

ইয়াছিন আলী কোন পড়ালেখা জানেন না। অথচ বর্তমান এই যুগে কোনোরকম প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া হুবহু সময় বলে দেন। রাস্তাঘাটে কেউ তাকে কয়টা বাজে জিজ্ঞাসা করলে ঘড়ি ছাড়াই হাতের দিকে তাকিয়ে হুবহু সময় বলে দেওয়া তার বিরল এমন প্রতিভা দেখে স্থানীয়রা রীতিমতো বিষ্মিত। তাকে নিয়ে গর্বও করেন স্থানীয়রা।

Image

জাহিদ নেওয়াজ নামে স্থানীয় একজন বলেন- ছোটবেলা থেকেই দেখছি তার মধ্যে কি এমন আধ্যাত্মিক রয়েছে, যখনই তাকে কেউ কয়টা বাজে জিজ্ঞাসা করেন তিনি সঠিক সময় বলে দেন। অথচ তিনি কোন লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু তার সময় সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে। এইটা খুবই ভালো লাগার একটি বিষয়।

মেহেদী চৌধুরীর নামে আরেকজন বলেন- রাস্তাঘাটে দেখা হলে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কয়টা বাজে তখন তিনি ১০টা বাজলে ১০টায় বলে দেন। পরে ঘড়ির সাথে মিলালে তার বলার সময় মিলে যায়। তার এমন প্রতিভা আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। তার এমন সময় বলে দেওয়া একটি অস্বাভাবিক কাজ। যা কখনোই কল্পনা করা যায় না। লেখাপড়াও কিছু জানেন না। নিজের নামও লিখতে পারেন না। সাধারন একজন মানুষ। তারমধ্যে এমন প্রতিভা আছে যেটা আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয়।

সুবর্ণা নামে এক স্কুল ছাত্রী বলেন- আমরা যখন স্কুলে যাওয়া বা আসার পথে দাদুর সাথে (ইয়াছিন আলী) দেখা হলে সময় জানার জন্য দাদুকে জিজ্ঞাসা করা হয়; দাদু কয়টা বাজে? দাদু ঘড়ি বা মোবাইল কোন কিছু না দেখেই সঠিক সময় বলে দেন। তার মতো একজন লেখাপড়া না জানা মানুষ এরকম যুগে ঘড়ি ছাড়াই সময় বলে দেন এটা কল্পনাও করা যায় না।

এ বিষয়ে ইয়াছিন আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান- পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি ঘড়ি ব্যবহার করতেন। সেসময় তিনি হঠাৎ করে একটি রেলস্টেশনে এক সুইপারের হাতে ঘড়ি দেখে অবাক হয়ে য়ান। এরপর ক্ষোভে নিয়ত করেন ঘরে আর ব্যবহার করবেন না। হাতে থাকা ঘড়ি ছুঁড়ে ফেলে প্রতিজ্ঞা করেন নিজের মনের দেয়াল বানাবেন ঘড়ি।

তিনি আরও জানান- তখন থেকে চলার পথে বা যে কোন সময় চোখ বন্ধ করে করে ঘড়ি না দেখে সময় আয়ত্ত করার চেষ্টা শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে আস্তে আস্তে তিনি ঘড়ি না দেখে হাতের দিকে তাকিয়ে সময় বলে দেওয়া শুরু করলেন। প্রচার শুরু হয়ে গেল ইয়াছিন ঘড়ি না দেখে সময় বলতে পারেন। এইভাবেই ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঘড়ি না দেখে সময় বলে দিয়ে আসছেন বলে দাবি করেন ৭৫ বছর বয়সী ইয়াছিন আলী।

ইয়াছিন আলী বলেন- এখনও যে কোন সময় কাজে রাস্তাঘাটে বের হলে লোকজন তাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর জিজ্ঞাসা করেন কয়টা বাজে। তখন সময় বলে দিলে তারা মোবাইলের সাথে সময় দেখে মিলে গেলে খুব আনন্দ পায়। সঠিক সময় বলতে পারায় তারও খুব ভালো লাগে।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker