নওগাঁ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া: নওগাঁয় মাঠে নেমেছেন এমপি পদপ্রার্থীরা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই নওগাঁর ছয়টি আসনে এমপি পদপ্রার্থীরা প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। ঈদুল আজহার ছুটিতে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ, ঈদ পুনর্মিলনী এবং সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরছেন তারা। বিশেষত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা বেশ সরব রয়েছেন।

সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন ঘোষণা পেয়ে নওগাঁয় মাঠে নেমে পড়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। তারা ঈদুল আজহার ছুটিতে এলাকায় প্রাথমিক গণসংযোগ সেরে নিয়েছেন। ঈদ উদযাপন করতে নিজ নিজ গ্রামে ফিরেছিলেন কর্মজীবী মানুষ। আর নানাভাবে তাদের কাছে যাওয়া, নজর কাড়ার চেষ্টা করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বেশি সরব দেখা গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়েনি।

নওগাঁর আসন ও প্রার্থীর তৎপরতা:

নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে ছয়টি আসন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও জামায়াত নওগাঁর ছয় আসনেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীরা ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে গ্রামে-গঞ্জে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন। ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নিজের বিষয়ে জানান দিয়েছেন তারা।

নওগাঁ-১ আসনে প্রার্থীরা:

নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসনে বিএনপির টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ছালেক চৌধুরী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ঈদের ছুটিতে ঈদ পুনর্মিলনীসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের বিষয়ে জানান দিয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য এই তিন প্রার্থী। এছাড়া ঈদে সরব ছিলেন নওগাঁ-১ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক। তিনি বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের কাছে দোয়া প্রার্থনা এবং সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দলের পক্ষ থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা আসছে সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার প্রচার ও লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়া-দাওয়া করেছেন। এছাড়া তার বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেছেন। ঈদের ছুটিতে নারী ও তরুণদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মতবিনিময় করেছেন।”

Image
নওগাঁ-২ আসনে প্রার্থীরা:

পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২ আসন। এই আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর রয়েছেন। ঈদের ছুটিতে তারা তিনজনই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, ঈদ পুনর্মিলনী, ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচের পুরস্কার বিতরণীসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে তারা তাদের অবস্থান জানান দিয়েছেন। এছাড়া ঈদের ছুটিতে সরব ছিলেন নওগাঁ-২ আসন থেকে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক

খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমার এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছিলাম। ঈদের ছুটির সময়টাতে চেষ্টা করেছি আমার নির্বাচনী এলাকার সব গ্রামে সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে। মানুষ ভোটের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।”

নওগাঁ-৩ আসনে প্রার্থীরা:

মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৩ আসন। এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট ও সাবেক সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে বিএনপি নেতা পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি। এখানে জামায়াতে ইসলামী মাহফুজুর রহমানকে তাদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এবার ঈদে বিএনপি ও জামায়াতের এসব নেতারা বেশ সরব দেখা গেছে।

বিএনপি নেতা ফজলে হুদা বাবুল বলেন, “শুধু এবার নয় প্রতি ঈদেই চেষ্টা করি এলাকার গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ঈদের আগে দুই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি বিতরণ করেছি। ঈদের ছুটিতে গ্রামীণ নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। ভোট মানে তাদের কাছে একটা উৎসব। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ সেই উৎসব থেকে বঞ্চিত।”

Image
নওগাঁ-৪ আসনে প্রার্থীরা:

মান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৪ আসন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে সরব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল মতিন, মান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী টিপু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী। জামায়াতে ইসলাম এই আসনে জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিবকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন।

বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন দেওয়া। কিন্তু তারা নির্বাচন রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেউ দেশের মানচিত্র পরিবর্তন করতে চায়, কেউ সংস্কারের নামে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। যে কারণে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আমরা যারা রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তারা সব পরিস্থিতিতে জনগণের সাথেই আছি।”

নওগাঁ-৫ আসনে প্রার্থীরা:

নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৫ আসন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সরব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ধলু। এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে আরও সরব রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন। এই আসনে জামায়াতে ইসলাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আ স ম সায়েমকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

নওগাঁ-৬ আসনে প্রার্থীরা:

রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রোজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী। এছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আলমগীর কবিরও এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে তৎপর রয়েছেন।

বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, “দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এরপর মানুষের কল্যাণের জন্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এরপর বিএনপির সব আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থেকে দলকে সংগঠিত করার করেছি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দলের জন্য কাজ করে গেছি। দলের একজন দীর্ঘদিনের কর্মী হিসেবে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।”

বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঈদে সরব দেখা গেলেও নতুন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker