নওগাঁ

নওগাঁয় কোরবানির পশুর হাট জমজমাট: দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় নওগাঁর পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি থাকলেও, দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। এরই মধ্যে নওগাঁয় জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম বিভিন্ন পশুর হাটগুলো। ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। এবারও বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তা ও অভিযোগ:

বিক্রেতারা জানান, হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরু কেউ কিনতে চাইছেন না। বড় আকারের গরুর ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়াও হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ বেশি হওয়ায় খরচের তুলনায় তেমন দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে শঙ্কায় আছেন খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা।

ক্রেতাদের অপেক্ষা ও দামের দাবি:

ক্রেতারা জানান, ঈদের এখনও বেশ কয়েক দিন বাকি আছে। এখন গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন করা কষ্টকর বিষয়। ঈদের দুই-এক দিন আগে গরু কিনলে বাড়িতে রাখা সহজ হবে। তাই শেষ দিকে গরু কেনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি বলে দাবি তাদের।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য ও হাটের চিত্র:

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ বছর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারে দেশীয়, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাত লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু লালনপালন করা হয়েছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি পশু। এসব গরু বেচাকেনার জন্য জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ৩৬টি হাট বসানো হয়েছে। এছাড়াও উদ্বৃত্ত পশু ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করবেন।

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সতিহাট, মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি, রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর, আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ১২টার পর থেকেই এসব হাটে বিভিন্ন জাতের ও আকারের গরু নিয়ে আসতে শুরু করেন খামারি, প্রান্তিক চাষি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পর থেকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হাটগুলো। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে। হাটগুলোতে ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন, ঘুরছেন এবং দরদাম করে কিনছেন পছন্দের পশু। তবে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি। ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। এসব হাটে ক্রেতাদের পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা। তবে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে।

Image

খামারি ও বিক্রেতাদের বক্তব্য:

জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট চৌবাড়িয়ায় মান্দা উপজেলার মৈনম থেকে আসা খামারি আলমগীর বলেন,

“হাটে প্রচুর দেশি গরু উঠেছে। গো-খাদ্য, খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু লালন-পালনে এ বছর গরু প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম বলছে না ক্রেতারা। বড় গরুর দাম আরও কম দিতে চাচ্ছেন ক্রেতারা। তার ওপর ফেরত নিয়ে গেলে আবার খরচ আছে। তাই কিছুটা লস হলেও বিক্রি করে চলে যাব।”

আরেক গরু বিক্রেতা মোসলেম আলী বলেন,

“কোরবানির হাটে বিক্রি করবো বলে চারটি গরু বাড়িতে লালন-পালন করে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। এরমধ্যে মাঝারি সাইজ দু’টি ও বড় সাইজ দু’টি। কিন্তু দামে হচ্ছে না, এই জন্য বিক্রি করতে পারছি না। বাজারে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরু কেউ ওইভাবে দামই বলছে না। বড় গরু পালনে খরচ বেড়েছে। খরচ বাড়লেও গরুর দাম আগের মতোই আছে।”

আনারুল ইসলাম বলেন,

“দু’টি গরু নিয়ে আসছিলাম। একটার দাম এক লাখ ৪০ হাজার চেয়েছিলাম। কিন্তু এক লাখ ২০ হাজারের বেশি দাম বলছে না কেউ। এখন বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেলে আবার খরচ বাড়বে। তাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিলাম। আরেকটা গরু এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম হেঁকেছি, ক্রেতারা বিভিন্ন দাম বলছেন। দামে মিললে দিয়ে দেব। তবে গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় আগের গরু বিক্রি করে ততোটা লাভ হয়নি।”

ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া:

তবে বিক্রেতার দাবির সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। এই হাটে গরু কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন,

“হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু উঠছে। গরুগুলো দেখতেও খুব সুন্দর। তবে দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে দাম ৮ -১২ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।”

আকতার হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন,

“আমরা যারা কোরবানি দেই, আমাদের অনেকের গরু রাখার জায়গা থাকে না। তাই ঈদের দু-তিন দিন আগেই কোরবানির পশু কিনে থাকি। আজ শুধু ঘুরছি এবং দরদাম করছি।”

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার আশ্বাস:

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন,

“সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালন-পালনে আগে থেকেই জেলার খামারিদের মাঝে প্রচারণা চালানো হয়েছে। চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু থাকায় কোনো সংকট হবে না। হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। এছাড়াও নওগাঁ সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় যাতে ভারতীয় গরু না আসে, এ জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আশা করি যে এ বছর খামারিরা লাভের মুখ দেখবেন।”

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker