বগুড়ার কাহালুতে সাবামনি নামের দুই বছরের শিশু কন্যাকে হত্যা করে জিনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সাবামনি নামের ওই শিশুকে হত্যার ছয়দিন পর তারা চাচা রেজওয়ানের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নিহত শিশুর বাবা কাহালু থানার দামাই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বাদীর চাচাতো ভাই রেজওয়ানকে আসামি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাহাঙ্গীর হোসেনের দুই মেয়ে জেরিন ও সাবামনি প্রতিবেশী হাফিজারের বাড়ির পার্শ্বে বরই কুড়াতে যায়। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও দুই বোন বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একসময় বরই গাছের নিচে সাবামনিকে মৃত এবং জেরিনকে সজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদেরকে উদ্ধারের পর রেজওয়ান ও তার পরিবারের লোকজন সাবামনির মৃত্যুর জন্য জিনকে দায়ী করে এলাকায় প্রচার চালায়। এ ছাড়াও জেরিন ও তার মা রুজি বেগমকে সঙ্গে করে রেজওয়ানের পরিবারের লোকজন বগুড়া শহরের কামারগাড়ি এলাকায় আল আমিন নামের এক জিন ছাড়ানো ফকিরের কাছে নিয়ে আসেন। আল আমিন জেরিনকে দেখে জানায় বদ জিন তাকে ধরেছে। জেরিনকে সুস্থ করতে হলে বদ জিনকে ধরে বোতলে বন্দি করতে হবে। এ জন্য টাকা দিতে হবে সাড়ে ৫ হাজার। জেরিনের মায়ের কাছে টাকা না থাকায় সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এদিকে রেজওয়ান ও তার পরিবারের লোকজন জিনের হাতে সাবামনির মৃত্যু হয়েছে প্রচার করে তড়িঘড়ি করে মরদেহ দাফন সম্পন্ন করে। শিশুটির বাবা-মা ফকিরের কথা শুনে জিন তার সন্তানকে মেরে ফেলেছে বিশ্বাস করে চুপচাপ থাকেন।
এদিকে গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেরিন কিছুটা সুস্থ হয়ে জানায় তাদের চাচা রেজওয়ান সাবামনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় জেরিন চিৎকার করলে তার মাথাতেও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। জেরিন সুস্থ হওয়ার পর থেকে রেজওয়ান আত্মগোপন করেন। পরে নিহত সাবামনির বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে আল আমিন নামের জিন ছাড়ানো ফকির বলেন, শহরের কামারগাড়ি এলাকায় লাখো দাওয়া এক দোয়া নামে তার চেম্বার রয়েছে। জেরিন নামের ওই শিশুকে গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর নিয়ে আসা হয়। তার অবস্থা এবং পরিবারের লোকজনের মুখে কথা শুনে মনে হয়ে কোনো এক বদ জিন ধরে থাকায় শিশুটির জ্ঞান ফিরছে না। শিশুটিকে সুস্থ করতে হলে বদ জিনকে বোতল বন্দি করতে হবে। এ জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করি। তারা টাকা দিতে না পারায় জিনকে বন্দি করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রেজওয়ান আলী শেখ কাহালু উপজেলার দামাই গ্রামের হোসাইন আলী শেখের ছেলে।
ওসি জানান, নিহত শিশুর বাবা কাহালু থানার দামাই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় রেজওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পরপরই তাকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্চিতা ইসলাম আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ফলে তাকে বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও শিশু সাবামনির মরদেহ উদ্ধার করে তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড শুনানির দিন এ বিষয়ে আদেশ প্রদান করবে আদালত।
কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমবার হোসেন বলেন, বাদীর অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। নিহত শিশুর মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার ব্যবস্থা নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.