সরিষাবাড়ী

স্বামী শিক্ষক, স্ত্রী, আয়া: সরিষাবাড়ীতে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারামারি

একই প্রতিষ্ঠানে স্বামী শিক্ষক এবং তার স্ত্রী আয়া পদে।জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাটাবুগা দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সংবাদ পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

মাদ্রাসা ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, পাটাবুগা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক রমজান আলী ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) ও পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাঁটিয়ে তার স্ত্রী আঞ্জুমনোয়ারাকে একই মাদরাসায় আয়া পদে নিয়োগ দেন।

এরপর প্রায় দুইবছর ধরেই আয়া আঞ্জুমনোয়ারা মাদরাসায় উপস্থিত না হয়েই নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন। তিনি মাসে মাত্র ১-২ দিন উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় পুরোমাসের স্বাক্ষর একসাথে দিয়ে যান। 

এদিকে মাদ্রাসায় চলমান ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিকী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে পরীক্ষারপূর্বে ৯ম শ্রেণির কক্ষে আবর্জনা থাকায় শিক্ষার্থীরা আয়া আঞ্জুমনোয়ারাকে তা পরিষ্কার করতে বলেন। এসময় আয়া ও তার স্বামী রমজান আলী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে বলেন যে, তোদের মা-বোন এনে এসব পরিষ্কার করা।

আমার বউ এসব করতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে রমজান আলী মুঠোফোনে বহিরাগত লোকজন ডেকে এনে তাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

পরে এঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া (মঙ্গলবার ১০ তারিখ) পরীক্ষা পরবর্তীতে নেওয়া হবে বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয় কতৃপর্ক্ষ। এঘটনায় কয়াকজন শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন এবং প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এবিষয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

শিক্ষার্থী আল-আমিন, শাকিল ও সোহান জানান, আয়া মাদরাসায় আসেন না, আসলেও তার সাথে কথা বলা যায় না। খালা ডাকলে রেগে যান, মেডাম ডাকতে বলেন। কিছু বলতে গেলে তার স্বামী রমজান স্যার পরীক্ষার ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। আজ আয়াকে কক্ষ পরিষ্কার করার কথা বললেই শিক্ষক রমজান স্যার আমাদের মারতে আসেন।

মাদরাসার নিরাপত্তাকর্মী রুহুল আমিন অভিযোগ করেন, আঞ্জুমনোয়ারা এবং তিনি একসঙ্গেই চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলেও আয়া অনুপস্থিত থাকেন, শুধু মাস শেষে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন তুলে নেন। আয়ার কাজগুলোও আমাদেরই করতে হয়।

অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আয়া ও তার স্বামীর অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা যায় না। কিছু বললেই শো-কজ ও চাকরিচ্যুতির হুমকি, বহিরাগত ক্যাডার এনে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখান।

শরীর চর্চা শিক্ষক এ কে এম আমিনুল হক অভিযোগ করেন, ‘গত ২৬ নভেম্বর আমি আয়ার কাছে পানি চাইলে স্বামী-স্ত্রী মিলে আমাকে মারধর করে।

এ-ব্যাপারে মাদরাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট আইয়ুব আলী বলেন, ‘আয়া আঞ্জুৃমনোয়ারা ও তার স্বামী রমজান আলীকে অফিসিয়ালভাবে বারবার সতর্ক করা হলেও কোনো পরিবর্তন হননি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এমন ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক রমজান আলী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এবিষয়ে এখন তার কোন বক্তব্য নেই। তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। এই বলে তিনি এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠান থেকে মটর সাইকেল যোগে চলে যান।

এ-বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, ‘হামলা-মারধরের বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এরআগেও অভিযুক্ত ওই দম্পতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আজকের পরীক্ষা আবাদত বন্ধ, পরবর্তীতে নেওয়া হবে।

এ-ঘটনায় সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. চাঁদ মিয়া বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুপারকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এখনও লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker