অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের ৪ বছর শুয়াকৈর ভাঙ্গা সেতু। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার শুয়াকৈর গ্রামের ঝিনাই নদীর ওপর ২০০ মিটার একটি গার্ডার সেতু। সেতুটি বন্যার পানির তোড়ে নদীতে বিলীন হয় ২০২০ সালে। প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটির পুনঃনির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরফলে নদী পারাপরে চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে চরাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ।
সেতুটি না থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ তাদের কাঙ্খিত সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেন না। সেতু ভেঙ্গে নদী পারাপারে চরম বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে ওই এলাকার মানুষের। বর্ষা শুরু হতে না হতে নদীর এপাড় ওপাড়ে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় কৃষক-জনতার। কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া চরাঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী লেখাপড়ারও চরম বিঘ্নত হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ‘উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত শুয়াকৈর ঝিনাই নদী। এ ইউনিয়নসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের একমাত্র যোগাযোগের সংযোগ ব্যবস্থা শুয়াকৈর ঝিনাই নদী। এ অঞ্চলের মানুষের কৃষি পণ্য পরিবহণসহ সড়ক যোগাযোগ সুগম করতে ২০০৬ সালে শুয়াকৈর ঝিনাই নদী ওপর ২০০ মিটারের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগের দুঃখ দূর হয়। সেতুর পাড়ে গড়ে উঠে একটি বাজার। এতে গড়ে উঠে শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই সেতু দিয়ে চলাচল শুরু হয় সকল প্রকার যানবাহন। এ যানবাহন দিয়ে অতি সহজে চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে ও কৃষি পণ্য পরিবহণের সুযোগ হয়ে উঠে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ীরা ও জরুরী চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন সুবিধা সহজেই ভোগ করে আসছিলেন চরাঞ্চলের মানুষগুলি।
হঠাৎ করে ২০২০ সালের ২২ জুলাই বন্যায় পানির স্রোতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য গার্ডার সেতু মাঝামাঝি ৪টি পিলার ও তিনটি স্প্যানসহ ৬০ মিটার সেতু নদীতে এক রাতেই বিলীন হয়ে য়ায়। এর ফলে চরাঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে নদী পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হয় ওই অঞ্চলের মানুষের। সেতুটি ছিল চরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু। এ সেতুটি নদীতে বিলীন হওয়ায় সাধারন মানুষে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যেনো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া সেতুটির দুপাশে অংশ মূর্তিমান হিসেবে দাড়িয়ে আছে। সেতুটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া চার বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি নির্মাণের কোনো উদ্দ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এতে চরম অনিশ্চিত হতাশায় ভোগছেন চরাঞ্চলের অর্ধশত গ্রামবাসী। এ জনবহুল চরাঞ্চলের নারী-পুরুষরা নদী পারাপারে বিকল্প হিসেবে নৌকায় গাদাগাদি করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। নৌকায় পারাপারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় নদীর দুই পাড়ের মানুষের। এতেও এক চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষের। এরফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সঠিক সময় বিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারছে না। এতে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতির শিকার হয়ে আসছে। এ ছাড়া কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য আনা নেওয়ারও ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা কৃষি পণ্যের ন্যায মুল্য বঞ্চিত হয়ে আসছে র্দীঘ দিন ধরে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে চরাঞ্চলের কৃষকরা। সেতুটি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে শতশত দরিদ্র রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা চালকরা। ক্ষতিগ্রস্থ্য’ হচ্ছে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। বন্যায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ব্যবহার করে। নৌকার অপেক্ষা না করে দু-দুরান্ত রাস্তা ব্যাবহারে বাধ্য হতে হচ্ছে ভাঙ্গা সেতুর ফলে। এ সেতু সঙ্কার বা নতুন কোন পদক্ষেপ গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান র্অধশতাধিক গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, ‘বর্তমান সরকার র্দীঘ দিন ধরে দেশ পরিচালনা করে আসছে। দেশের অনেক উন্নয়নের কাজ, বড় বড় ব্রিজ র্নিমান করছে। চার বছর হয়ে গেলো আমাদের ভেঙ্গে যাওয়া সেতুর কোন ব্যবস্থা হলো না। আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান, সোরহাব মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আফজাল হোসেন, বাবুল মিয়া, হেলাল উদ্দিন ও মেম্বার বাবু মিয়া আরও বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারকে নৌকায় ভোট দেয়ায় যুগ যুগ ধরে এ শুয়াকৈর গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় ভারত। আজ একটি ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে চার বছর কেউ কোন উদ্যোগ নিলনা। আমাদের দুঃখ দুর্দশার দেখার কেউ নেই। ব্রিজ নির্মানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রানের দাবি।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘এই ব্রিজের সঙ্কার কাজের ড্রয়িং, ডিজাইন ইউনিটে রয়েছে। ইউনিটের কাজ শেষ হলইে নতুন করে ব্রীজ তৈরী ব্যয়ের বরাদ্দের টেন্ডার দরপত্র আহব্বান করা হবে। ব্রীজ সঙ্কারের সকল প্রস্ততি চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ-বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জানান, ‘শুয়াকৈর ঝিনাই নদীর সেতু সঙ্কার কাজের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খুব শ্রীঘ্যই ব্রীজ নির্মানের অনুমোদন হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পাঠান বলেন, ‘বন্যায় ব্রীজটির মাঝখানে ভেঙে যাওয়ায় এলাকার মানুষের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা দূর করতে ব্রিজের পূণঃনির্মান বা ভেঙে যাওয়া অংশ সংস্কার করা সমাধানের চেষ্ঠা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুয়াকৈর ব্রিজের কাজে মেরামতের টেন্ডার হয়েছিল। বরাদ্ধ কম থাকায় পুনরায় নতুন করে টেন্ডার কাজ চলমান রয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে ব্রিজের কাজ শুরু হবে বলেও তিনি জানান।