জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যৌতুকের দাবিতে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে এক সেনা সদস্যের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী স্ত্রী। সন্তানদের ভরণপোষণ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে সরিষাবাড়ী পৌরসভার আরামনগর এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলামের (৫০) সাথে একই গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রোকেয়া বেগম রানীর (৩৬) বিয়ে হয়।
বিয়ের ২৪ বছরের জীবনে তাদের সংসারে রেজিয়া রফিক আশা (২০) ও রোজিনা রফিক আকাংখার (১৫) জন্ম হয়। স্বামী রফিকুল ইসলাম সেনাবাহিনীতে চাকুরি করতেন। চাকুরিতে থাকাকালে স্ত্রী-সন্তানদের তেমন খোঁজ খবর রাখতেন না রফিক। টাকার প্রয়োজন হলেই বাড়িতে এসে স্ত্রীর কাছে নানা অজুহাতে টাকা চাইতেন রফিক। টাকা না পেলেই শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো বলে দাবি করেন স্ত্রী।
এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে কলহ লেগেই থাকত। ২০১৯ সালে রফিকুল ইসলাম চাকুরি থেকে অবসর নেন। কিছুদিন পর ব্যবসা শুরু করার কথা বলে স্ত্রী রোকেয়া বেগমের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন রফিকুল। টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সে। স্ত্রীর উপর চালানো হয় নির্যাতন। একপর্যায়ে ২০২০ সালের জানুয়ারীতে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি।
পরে স্থানীয়রা মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ফের তাদেরকে সংসার করার ব্যবস্থা করে দেন। এতেও কাজ হয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতে আবারো ওই ৫ লাখ টাকার দাবি জানায় রফিক।
বাপের বাড়ি থেকে ওই টাকা এনে দিতে রাজি হননি রোকেয়া। এতে উত্তেজিত হয়ে উঠেন রফিক। একপর্যায়ে স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে এলোপাতারি মারধর শুরু করেন। পরে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন স্বামী রফিকুল ইসলাম। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ নিয়ে ২০২০ সালে রোকেয়া বেগম বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন (২০০০ এর ১১-গ) দমন আইনে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালত পিবিআইকে মামলাটির তদন্তভার দেয়। পিবিআই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তদন্ত কাজ শুরু করে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই।
রফিকুল ইসলাম তার মেয়েদের ভরনপোষণ করবেন বলে আদালতের হলফনামায় উল্লেখ করলেও কোন টাকা-পয়সা দেননি। টাকা-পয়সা না পেয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রোকেয়া বেগম ও তার পরিবার।
এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলামের বড় মেয়ে রেজিয়া রফিক আশা বলেন, তার বাবা ২০২০ সাল থেকে তাদের কোন খরচ দিচ্ছেন না। এ কারনে তাদেরকে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।
রোকেয়া বেগম রাণী বলেন, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী নানা অজুহাতে তার কাছে টাকা চাইতো। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে না দিতে পারলেই তার উপর চালানো হতো নির্যাতন। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ২০২০ সালে আদালতে মামলা করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়েছে। তার মেয়েদের নামে ৫ লাখ করে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তা তারা স্থায়ী আমানতে অথবা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে গচ্ছিত রেখে মুনাফার টাকায় দৈনন্দিন খরচ মেটাবে বলেও তিনি জানান।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.