জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তর দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সারকারখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ-সংবাদকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। সংঘাত এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যমুনা সারকারখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংলড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিকের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংলড়ি মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের বিরোধ চলে আসছিল।
কারখানার শ্রমিক-কমর্চারি ইউনিয়নের আসন্ন (সিবিএ) নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। এর আগে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে রফিকুল ইসলামের লোকজন গত বুধবার বিকেলে তারাকান্দি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়।
শহীদ মিনারে অবস্থানকালে তারা যুবলীগ কর্মী ও আশরাফুল আলম মানিকের সমর্থক খোকন মিয়াকে (৩৫) বেধড়ক মারধর করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে মানিকের লোকজন মিলে রফিক গ্রুপের কামরুজ্জামানকে (৪০) পাল্টা মারধর করেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে খোকন ও কামরুজ্জামানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বুধবার রাতে রফিকের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফের যমুনা সার কারখানা এলাকায় অবস্থান নেয়। এতে ওই এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে অপরপক্ষ কারখানা এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে কারখানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। ইট-পাটকেলের আঘাতে পুলিশের (উপ-পরিদর্শক) ফয়জুর রহমান, সোহাগ, আবু শামা, সংবাদকর্মী রাইসুল ইসলাম খোকন ও সোহেল রানা, আনিসুর রহমান (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩২), মো. মণ্ডল (২৫), শফিকুল ইসলাম (৩০), মিন্টু মিয়াসহ (৩০) উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারী যমুনা সারকারখানা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে রফিক গ্রুপের ক্যাডার মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় মোর্শেদ জেল হাজতে গেলেও সম্প্রতি সে জামিনে মুক্ত হয়। পরে সে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
কারখানার শ্রমিক-কমর্চারি ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, আসন্ন সিবিএ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে একটি পক্ষ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্রশাসন কঠোর না হলে নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক অভিযোগ করে বলেন, সিবিএ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রফিকুল ইসলাম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিএনপি থেকে আসা তার ক্যাডার মোর্শেদকে দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা ও ভীতিসঞ্চার করাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সারকারখানার পরিবহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মুরাদ হাসান এমপির লোকজন সাধারণ শ্রমিকদের মারধর করে চলেছে। শ্রমিকরা পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় কারখানা এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তার লোকদের ওপর গুলি করা হয়েছে। আহতদের কয়েকজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে তার লোকজনকে দায়ী করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জামালপুরের এএসপি (সদর সার্কেল) মো: জাকির হোসেন সুমন জানান, যমুনা সারকারখানার সিবিএ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.