সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে লুটপাটসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিতর্কিত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী শরিফুল ইসলামকে পদথেকে স্থাগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয়বাদী কৃষকদল কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবি; হাসান জাফির তুহিন এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় প্যাডে এ আদেশ প্রদান করা হয়।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী শরিফুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীরা হিংস্র হয়ে লুটপাট, ভাংচুর করে। এমনকি প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি প্রদানের পাশাপাশি এক সিনিয়র সাংবাদিককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে।
ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ও স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ চেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকসহ কালিগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ।
উল্লেখ্য যে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কুশুলিয়া গ্রামের কাজী নবীদুল ইসলাম ওরফে নবু কাজীর ছেলে কাজী শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত কুশুলিয়া এবং লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামে অবস্থিত তন্ময় মন্ডল নামে এক ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায়। তারা ওই ব্যবসায়ীর দু’টি দোকান থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার ফিড ও ঔষধ এবং লক্ষ্মীনাথ গ্রামে জনৈক মহাসিন হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে রাখা ব্যবসায়ী তন্ময় মন্ডলের একটি বাজাজ ডিসকভার মোটরসাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। ওই চক্রটি আরও কয়েকজনের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট এবং মাছের ঘেরে লুটপাট করে বলে অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মৌতলা গ্রামের কাজী সোহেল লুটকৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে ওই ব্যবসায়ীর ভাই বিকাশ মন্ডল ওরফে বিকাশ সাধুর নিকট ফেরত দেন (কাজী সোহেলের অডিও রেকর্ড সংরক্ষণ আছে)। সে সময়ে কাজী শরিফুলের কার্যক্রমের প্রকাশ্য মদদ দেন উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক উপজেলার ভদ্রখালী গ্রামের বহুল বিতর্কিত রোকনুজ্জামান রোকন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শরিফুলের নিকট থেকে মোটর সাইকেল উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্ধর্ষ রোকনুজ্জামান রোকন ও কাজী শরিফুল ইসলাম নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং তাদের সহযোগীদের আড়াল করার উদ্দেশ্যে সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীকে বিভ্রান্ত করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক নিয়াজ কওছার তুহিনসহ ৪ সাংবাদিকের নামে কালিগঞ্জ থানার সম্মুখে মানববন্ধনের নামে মিথ্যা উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে ও মামলা-হামলা করার প্রকাশ্য হুমকি প্রদর্শন করে।
পরবর্তীতে তাদের একটি গ্রুপ উপজেলা সদরে অবস্থিত রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজে যেয়েও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একইদিন বেলা আড়াইটার দিকে রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজের সম্মুখের রাস্তায় রোকনুজ্জামান রোকনের দুই অজ্ঞাতনামা সহযোগীরা রিপোর্টার্স ক্লাবের একজন সিনিয়র সাংবাদিকের পথরোধ করে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে হুমকি, অশ্লীল গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে বলা হয়, গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সমাজের সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান এবং নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং অপরাধমুলক কর্মকান্ড দমনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে সংবাদপত্র। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভ্রান্তিমূলক অসত্য কোন তথ্য থাকলে সেক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে সাংবাদিকদের বিচারের সম্মুখীন করা যেতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঢালাওভাবে মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগে অভিযুক্ত করা ও প্রকাশ্য হুমকি ধামকি প্রদান, ভূয়া মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি প্রদানের বিষয়টি সাংবাদিক সমাজের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক ও ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরণের দৃশ্যমান অপতৎপরতায় সাংবাদিক সমাজ হতাশা প্রকাশ করে রোকনুজ্জামান রোকন ও কাজী শরিফুল ইসলামসহ লুটেরা, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, সমাজবিরোধী ও শান্তি-শৃঙ্খলা অবনতিকারী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এবং নির্ভয়ে যথাযথভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এছাড়াও বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দলের সুনাম ধ্বংসের সাথে জড়িত নেতা-কর্মী ও তাদের মদদ দাতাদের বিরুদ্ধে দলের উচ্চপর্যায় থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিকবৃন্দ।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.