টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে কলা গাছের শহীদ মিনারে শিশুদের শ্রদ্ধা

টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অমর একুশের শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কলা গাছের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কোমলমতি শিশুরা। তারা নিজ হাতেই গড়েছে ওই শহীদ মিনার, তারপর ফুল দিয়ে অমর একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। কেউ বাড়ির গাছের ফুল দিয়ে, আবার কেউ বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুল কিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

কোমলমতি শিশুরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছ থেকে এবং বই পড়ে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে তারা জানতে পারে। পরে তারা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজ হাতে গড়া কলা গাছের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।  

Mission 90

সরেজমিনে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাগমারা, এনায়েতপুর, সন্তোষ বালুচরা, পিচুরিয়া, ধরেরবাড়ী, দুরিয়াবাড়ী, বানিয়াবাড়ী, কোনাবাড়ী, চিলাবাড়ীসহ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে দেখা যায়, স্থানীয় শিশু-কিশোররা বাড়ির উঠানে মাটি দিয়ে উঁচু করে কলাগাছ ও বাঁশ পুতে শহীদ মিনার তৈরি করেছে। তাতে বাঁশের কঞ্চি ও রঙিন কাগজ লাগিয়ে সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে।

প্রত্যেকটি শহীদ মিনারের ওপর অপেক্ষাকৃত ছোট কলাগাছের অতিরিক্ত পৃথক তিনটি টুকরা তীর্যকভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে। রঙিন কাগজ ও নানা রঙের ফুল দিয়ে প্রতিটি মিনার মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চারপাশে সুতা টানিয়ে রঙিন কাগজ ও বেলুন দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। শহীদ বেদীতে গাঁদা ও গোলাপফুল শোভা পাচ্ছে। পাশেই সাউন্ড সিস্টেমে দেশাত্মবোধক গান বাজানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে নিজেদের মধ্যে ভোজের আয়োজনও করেছে তারা। 

শিশু শিক্ষার্থী ফাহাদ মিয়া বলেন, ‘স্কুলে স্যার আমগো বলেছে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামে কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’

সাব্বির মিয়া বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হলেই আমরা পরিকল্পনা শুরু করি, কীভাবে শহীদ মিনার বানাবো। কোথা থেকে ফুল আনবো। কে কে আমাদের কাজে সহযোগিতা করবেন- এসব নিয়ে। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা কাজ শুরু করি। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের ছেলে মেয়েরা সবাই মিলে আমরা এখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।’

অপর শিশু শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউ নিজের বাড়ির ফুল আবার অনেকেই শহর থেকে ফুল কিনে এনে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর অনেক ভালো লাগছে।’

ধরেরবাড়ী মুসলিম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনার বানিয়ে শিশুদের শ্রদ্ধা নিবেদন ভাষা শহীদদের প্রতি শিশুদের অনুরাগের বহি:প্রকাশ। এরফলে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবে।

টাঙ্গাইল শহরের মডেল প্রি-প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক আব্দুল আলীম জানান, করোনা প্রতিরোধে স্কুল বন্ধ ও গ্রামে কোন স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় শিশুদেরকে নিজেদের তৈরি কলা গাছের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে। গ্রামে যে ফুল পাওয়া যায় সেই ফুল দিয়েই অধিকাংশ শিশু শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। কেউ কেউ শহর থেকে ফুল কিনে এনে শহীদ বেদীতে দিয়েছে। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রানুয়ারা খাতুন জানান, গ্রামে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় শিশুরা অস্থায়ীভাবে শহীদ  মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা নিবেদন একটি ভালো উদ্যোগ। তবে সরকার প্রতিটি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। পড়াশুনার মাধ্যমে তারা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে। এতে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker