মাদারীপুর

মাদারীপুরে বালু ব্যবসার নিয়ে সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দুই ভাইসহ নিহত তিন

মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডে বালু ব্যবসার নিয়ে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে আপন দুইভাইসহ তিনজন মারা গেছেন। এ সংঘর্ষে সময় ৫টি বসতঘরে আগুন দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় আরো ১০ আহত হয়েছেন। শনিবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে।

গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করেন। নিহতরা হলেন একই এলাকার আজিবর সরদারের ছেলে সাইফুল সর্দার (৪০) ও আতাউর সর্দার (৩৫) এবং তাদের চাচাতো ভাই মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সর্দার (১৭)।

অনেক আগেই থেকে একই এলাকার কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সর্দার। অপর আরেকপক্ষ একই এলাকার একই বংশের হোসেন সর্দার তিনিও বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বদ্ধ চলমান ছিল। একে অপরকে বালু উত্তোলন করতে বাধা দিয়ে আসছে।

এরই জেরের কারণে শনিবার বেলা ১১টার দিকে খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে একা পেয়ে সাইফুল সরদারের উপর হামলা চালায় হোসেন সর্দার এর লোকজন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় সাইফুলের বড়ভাই আতাউর সর্দার, আরেক ভাই অলিল সর্দার ও তার পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। এসময় প্রাণ রক্ষা করতে তিন ভাই দৌড়ে মসজিদের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন।

পরে সেখান থেকে তাদের টেনে হিঁচড়ে ও কোপাতে কোপাতে বাহিরে বের করে পরে প্রতিপক্ষের লোকজন এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই আপন দুই ভাই সাইফুল সর্দার ও আতাউর সর্দার মৃত্যুবরণ করেছেন। চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায়।

ঢামেক পুলিশ ফাড়ির উপপরিদর্শক মো. মাসুদ পলাশ সরদারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও নিহতদের ভাই অলিল সর্দার (২৮) ও আজিজুল হকের ছেলে তাজেল সর্দার (২৫) গুরুতর আহত হন। তাদের প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়াও আরো আহতরা হলেন নিহত সাইফুল সরদারের স্ত্রী সতী বেগম (২৫), নিহত আতাউর সরদারের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৩০), রোজিনা বেগম (৩৫) প্রমুখ। আহতরা মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এই ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় এখন উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

নিহতদের মা সুফিয়া বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, হোসেন সর্দার ও শাজাহান খা এর লোকজন আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। আরেক ছেলের অবস্থাও গুরুতর। এই হত্যার বিচার চাই।

নিহতদের বোন হাফিজা বেগম বলেন, আমাদের সব শেষ করে দিলো। আমাদের বংশ শেষ করে দিলো। আল্লাহর ঘরে লুকিয়েও আমরা ভাইরা রক্ষা পেলোনা। তাদের আল্লাহর ঘর মসজিদের ভেতর থেকে বের করে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের বিচার আল্লাহই করবেন। হোসেন সর্দার ও শাজাহান খা এর লোকজন আমাদের সব শেষ করে দিলো।

নিহত পলাশ সরদারের চাচাতো ভাই মো: জাফর সর্দার বলেন, মারামারির ঘটনা দেখতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন পলাশ। পলাশ কোন পক্ষেরর নয়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন। পলাশ সর্দার নামে আরো একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছেন। এ ব্যাপারে অভিযান চলমান আছে।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker