৪২ লাখ টাকায়ও মুক্তি পায়নি আসাদ, পরিবারের দাবি নির্যাতন করে হত্যা
উন্নত জীবনের আশায় আসাদ মাতুব্বর ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন ছিলো এই জন্য সে দুই বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিল। কিন্তু আসাদের সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেলো।
বুধবার ( ১ জানুয়ারি ) সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে খবর আসে আসাদ আর বেঁচে নেই। মৃত্যুর এমন খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যদের মাঝে এখন শোকের মাতম বইছে। আসাদের মা-বাবা, স্ত্রীসহ সন্তানদের কান্নায় এখন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পরিবার থেকে দাবি দালালরা অমানুষিক নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলেছে।
শুধু মেরেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা এখন মরদেহ ফেরত দিতেও চাওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এদিকে স্বজনরা দালাল রুবেলের বিচারসহ নিহত আসাদের লাশ বাংলাদেশে ফেরত চাইছেন।
জানা গেছে, মাদারীপুর ডাসার উপজেলার পশ্চিম কমলাপুর গ্রামের আসাদ মাতুব্বর (৩৮) বড় স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। কিন্তু লিবিয়া যাওয়ার পর সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় তার। সে মাফিয়াদের হাতে বন্দি হয়। কয়েক ধাপে ৪২ লাখ টাকা দিয়েও মুক্তি মেলেনি আসাদের।
দুই বছর আগে আবদুল হাকিম মাতুব্বরের ছেলে আসাদ মাতুব্বরের সাথে সদর উপজেলার ঝিকরহাট গ্রামের স্থানীয় দালাল রুবেল খানের ১৭ লাখ টাকার চুক্তি হয় ইতালি যাওয়ার। কিন্তু লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরেই টাকার জন্য দালাল চক্ররা একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চলায়। সেই সাথে টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এমনকি নির্যাতন করার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে দেখিয়ে আসাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে কয়েক দফায় দালাল চক্র নগদ এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ লক্ষ টাকা নেয়। আসাদ লিবিয়ায় বন্দি থেকেও পরিবারের সাথে প্রতিদিন যোগাযোগ রাখতে পেরেছিলেন। হঠাৎ বুধবার সন্ধ্যায় বাড়িতে লিবিয়া থেকে ফোন আসে আসাদ মারা গেছেন। এখন পরিবারের দাবি আসাদকে টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন দালাল রুবেল ও তার সহযোগীরা।
নিহতের স্ত্রী রাখি আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে টাকার জন্য দালালরা মেরে ফেলেছে। আমি সেদিন সকালে কথা বলেছি স্বামীর সাথে সন্ধ্যায় দালালরা খবর দিয়েছে আমার স্বামী মারা গেছে। আমি ভিডিও কলে লাশ দেখতে চাইলে লাশও দেখায়নি। আমি দালালের বিচার চাই।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িভর্তি মানুষের সবার চোখে পানি। বাড়ির আঙিনায় আসাদের মা, স্ত্রী দুই ছেলে, ভাই, বোনসহ স্বজনেরা আহাজারি থামছেনা যেন। প্রতিবেশী কেউ কেউ তাদেরকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছেন। পুরো বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
ছেলের মরদেহ ফেরত পেতে চায় নিহত আসাদের মা কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে দালালরা। আমরা লাশ ফেরত চাই। তবে লাশ নিতে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেছে দালাল রুবেল ও তার সহযোগীরা। আমরা দালালের বিচার চাই।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহ মো. সজীব বলেন, মাদারীপুরে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে। তাই স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহ দেশে আনার আবেদন করলে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।