মাদারীপুরের শিবচরে বিএনপির কর্মী সমাবেশে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে উপস্থিত থাকার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। এতে করে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচরে বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার একটি সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত দেখা গেছে একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতাকে। এছাড়াও হত্যা মামলার আসামি একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাকেও বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এরকম একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এই নিয়ে জেলা জুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এ অনুষ্ঠিত এই সমাবেশের মঞ্চে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহসিন উদ্দীন সোহেল বেপারীকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বিএনপির নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার সাথে কথা বলতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যানকে। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে।
জানা গেছে, সোমবার দুপুরে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাদশা বেপারীর বাড়িতে বিএনপির একাংশের কর্মীসভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই কর্মীসভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসময়ে তাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সভার মঞ্চেও বিএনপি নেতা নুরুদ্দিন মোল্লার সাথে একান্তে কথা বলতে দেখা যায় ওই চেয়ারম্যানকে। এছাড়াও একই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছে এমন খবর পাওয়া যায়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর এলাকার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৮ নং ও শিবচরের ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের নাইমুর রহমান হত্যা মামলার ৩৭ নং আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী। অন্যদিকে সজীব হাওলাদার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৭৪ নং আসামি।
শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্র দল নেতা বলেন, শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পায় নি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়। এরপরে থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিল না। ৫ আগস্ট এর পরে তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফিরতে চেষ্টা করছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার ২ জন আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল বেপারি ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সজিব হাওলাদারকে দলে ভিড়িয়ে বিএনপি কর্মীসমাবেশ করছেন। তাছাড়াও নুরুদ্দীন মোল্লার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আড়িয়াল খাঁ সেতু উদ্বোধন করতে আসার সময়ে ফেরিঘাটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফেরির পল্টুন কেটে দেওয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। অতিসত্বর হাইকমান্ডকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাই আমরা।
যোগদান বা সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয় জানতে সোহেল বেপারীর মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এবিষয়ে জানতে কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, দেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমাদের ছাত্রজনতা মারা গেছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেই আসামিদের সাথে বিএনপি নামধারী আওয়ামী লীগের পেতাত্বারা অপতৎপরতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপির এর তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপির ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.