গোবর উৎকৃষ্ট সার এ ছাড়াও দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গোবরের তৈরি ঘুঁটে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন গৃহিণীরা,এতে সাশ্রয় হচ্ছে প্রতিটি পরিবারে হাজার হাজার টাকা,থাকছেনা গ্যাসের সিলিন্ডার কিংবা কাঠের লাকড়ী কেনার জামেলা।এটি যেমন সহজলভ্য তেমনি রয়েছে ক্ষতিকর দিক। তবে,ব্যবহারের আগে ভালো করে শুকিয়ে নিলে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস থাকেনা বলে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিশোরগঞ্জের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় গোবর ঘুঁটের ব্যপক জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে
জানা গেছে।গরু বা মোষের মল অর্থাৎ গোবর শুকিয়ে গেলে তাকে বাংলায় বলে ঘুঁটে। শুকালে গোবরের চটচটে ভাব বা গন্ধ কোনটিই থাকে না, রংও ভিজে গোবরের থেকে অনেকটা ফর্সা হয়ে যায়।
শনিবার(৭ ডিসেম্বর)জেলার হোসেনপুর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়,নদের বেরি বাঁধের উপর, মাঠে পতিত ক্ষেতে, গাছে আবার ঘরের বেড়ায়, অনেকে আবার পাট কাঠিতে গোবরের প্রলেপ দিয়ে ঘরের বেড়া কিংবা ক্ষেতের বেড়ায় দাঁড় করিয়ে শুকাচ্ছে।
ঘুঁটে জ্বালানি হিসাবে কাজ করে কারণ গরু মোষের মলে অনেক অপরিপাচিত বা অর্ধপাচিত ঘাস ইত্যাদির কাষ্ঠল তন্তু থাকে যা সহজেই জ্বলে। এর কিছু অংশ দাউদাউ করে জ্বলে গেলেও বাকী অংশ অনেক্ষণ অবধি ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে, যাতে ভালো ধীর আঁচের রান্নাও করা যায়।
অন্যদিকে,রান্নার কাজে ব্যবহৃত এ গোবরের জ্বালানি মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায় বলছেন কৃষিবিদরা।
কৃষিবিদ ড. খালেদ কামাল মনে করেন রান্নার সময় যখন গোবরের ঘুঁটে জ্বালানো হয়, তখন এর থেকে ধোঁয়া বের হয়।সেই ধোঁয়া সরাসরি প্রবেশ করে চোখে। চোখে লাগার সঙ্গে সঙ্গেই পানি বের হয় এবং চোখ ব্যথা করে।কারণ এ ধোঁয়াতে রয়েছে ক্ষতিকারক মিথেন গ্যাস।দীর্ঘদিন ঘুঁটে ব্যবহার করে রান্না করলে চোখ অন্ধ হতে পারে বলে ধারণা করেন।
গ্রামের নারীদের বৃদ্ধাকালীন সময়ের অন্ধত্বের বড় কারণ এটি- যোগ করেন এ কৃষিবিদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়,এ ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাস এবং লান্সের জন্য ক্ষতিকারক। হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। এছাড়া গোবরে ক্ষতিকারক আর্সেনিক রয়েছে। ধোঁয়ার মাধ্যমে সেই আর্সেনিক মানবদেহে প্রবেশ করে। যা কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া গোবর থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়, যা জ্বালানি হিসেবে ভালো ভূমিকা রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভাবিত ভার্মি কমপোস্ট তৈরি করতেও গোবর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। জৈব সার হিসেবে এটি জমিতে ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন কয়েকগুন বাড়ে। তাই ‘গোবরের ব্যবহার জমিতে হলেই ভালো।
হোসেনপুর উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.উজ্জ্বল হোসাইন আরও জানান, গোবর দিয়ে যে জ্বালানি তৈরি করা হয় এগুলোর পরিবেশের উপর কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া নাই।
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।তবে ভালো করে শুকানো প্রয়োজন তাতে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস থাকেনা।