কিশোরগঞ্জ

খড়ে কৃষকের বাজিমাৎ

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ উপজেলায় আমন মৌসুমের ধান কাটার পর মাড়াই শেষে খড় দিয়ে গাদা তৈরির রেওয়াজ অনেক আগের।
কয়েক বছর আগেও কৃষকরা ধান মাড়াইয়ের বিনিময়ে এসব খড় মানুষকে দিয়ে দিতেন। সময়ের পরিবর্তনে এসব খড় এখন মূল্যবান বস্তু।
গো-খাদ্যের জন্য ক্ষেতে থাকা অবস্থাতেই খড় কিনে নিচ্ছেন খামারীরা। আর এতে খড় বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত মাঠে ঘাস থাকে না। ফলে গরুর খামারীরা খাদ্যের যোগান দিতে বিপাকে পড়ে। তাই ঘাসের বিকল্প হিসেবে তারা এসব খড় কিনে রাখছে। 
ফলে ধান কাটা শেষে এখন কৃষকদের মধ্যে খড় বিক্রির ধুম পড়েছে। এ উপজেলায় এখন প্রতি কাঠা আমনের খড় এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অধিকাংশ চাষিই এখন খড় বিক্রিতে বেশি উৎসাহী। হাটবাজারে ধান নিয়ে অনেক সময় বসে থাকতে হয়। কিন্তু ধান কাটার আগেই খড়ের খদ্দের জুটে যাচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার জগদল,পুমদি,ধুলজুরী সহ কয়কেটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা ও খামারীরা খড়ের গাদা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
তারা বলেন,ধানের চেয়ে এখন খড়ের কদর বেশি বলা যায়। ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০০ আঁটি খড় হয়। একেকটি খড়ের আঁটি পাঁচ থেকে ছয় টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 
স্থানীয় কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় মোট ৮ হাজার ৪ শত ৭৬ হেক্টর  জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। এ উপজেলায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গবাদিপশু  লালন পালনে ঘাসের পাশাপাশি খড়ও উৎকৃষ্ট খাদ্য।
খাবার হিসেবে প্রতিটি গরুকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় আঁটি খড় দিতে হয়। গাভির জন্য খড় খুবই উপকারী। এ জন্য কৃষকেরা বাজার থেকে কেনা গোখাদ্যের চেয়ে ধানের খড়কে বেশি গুরুত্ব দেন।
উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,আমন মৌসুমের ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। তবে এখন ধান বিক্রির চেয়ে খড় বিক্রির প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি।
জগদল গ্রামের কৃষক মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ৮ কাঠা ক্ষেতের খড় ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি৷ ধান কাটার আগেই গরুর খামারী খড় কিনেছেন।
আগে খড়ের এত মূল্য ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে খড় বিক্রি করে আমরা বাড়তি আয় করতে পারছি।’
ধুলজুরী গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘৩ কাঠা ক্ষেতের খড় ৩২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। খড়ের দাম না থাকলে ধান চাষে যে খরচ হয়েছে তাতে লোকসান হতো। ‘
কৃষক দ্বীন ইসলাম জানান,কয়েক বছর আগেও আমরা খড় মানুষকে বিনামূল্যে দিয়ে দিতাম। এখন আর বিনামূল্যে চাইতে পারে না।
নিজের গরুর জন্য খড় রেখে বাকি গুলো বিক্রি করে দিয়েছি। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষেও লাভবান হচ্ছি।
গরুর খামারী আল আমিন জানান,আগে আশপাশে অনেক খালি জায়গা ছিল। ঘাসের অভাব ছিল না। এখন জমি পড়ে থাকে না।
ঘাসের জমির অভাব, তাই খড়ের দামও বেড়ে গেছে। বাজারে গরুর খাবারের দামও বেশি। তাই খড়েই ভরসা রাখি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোদাসিল হায়দার আলমগীর বলেন, ধানের পাশাপাড়ি খড় বিক্রি করে কৃষকরা বাড়তি আয় করে লাভবান হচ্ছেন।
এ সময় এলাকায় ঘাসের সংকট থাকে। তাই গোখাদ্য হিসেবে খড়ের আঁটির চাহিদা আছে।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker