বন্যার্তদের পাশে ব্লাড ডোনার এসএসসি- ২০০১
লক্ষ্মীপুরে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে অনলাইন ভিত্তিক ফেইসবুক গ্রুপ ব্লাড ডোনার এসএসসি- ২০০১ গ্রুপের সদস্যরা। তারা লক্ষ্মীপুর জেলায় বেসক্যাম্প করে এক সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় বন্যার্তদের ঘরে ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়।
গ্রুপের ক্রিয়েটর এডমিশন ডা: রমজান মাহমুদ রানা এবং লেখক ও কলামিস্ট এস এম মিজানুর রহমান মামুনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটা টীম কিশোরগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর গিয়ে এ কার্যক্রম করে। ভারত থেকে আসা পানিতে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরসহ চট্টগ্রামের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে যায় পানির নিচে। প্রাণ বাঁচাতে দিগবিদিক ছোটাছুটি করে অনেকেই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এবং উঁচু এলাকাতে আশ্রয় নেয়, আবার কেউ কেউ পানির মাঝেই ঘরবন্দী হয়ে কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন।
আকষ্মিক এই বন্যার পানিতে সবকিছু তলিয়ে দেখা দেয় খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের চরম দুর্ভোগ ও হাহাকার। ঠিক এই মুহুর্তে জাতিগোষ্ঠী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গোটা বাংলার মানুষ এক হয়ে দাড়িয়ে যায় বানবাসীর পাশে। কেউ বিভিন্ন বিশ্বস্ত সংগঠনের মাধ্যমে, কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, কেউ বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে, টাকা পয়সা শুকনো খাবার জামাকাপড় ঔষধ পৌঁছে দিচ্ছে ওইসব বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে।
বন্যাদুর্গতদের এই দুর্যোগময় মুহুর্তে বসে নেই ব্লাড ডোনার এসএসসি- ২০০১ গ্রুপ। সকল মিডিয়ার ফোকাস যখন ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী তখন এই গ্রুপের ম্যানেজমেন্টের নজর চলে যায় অবহেলিত লক্ষ্মীপুরের দিকে। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮০০, নেই কোনো আর্থিক ফান্ড। তাই এই দুর্যোগ মুহুর্তে নিজেদের মধ্যে মিটিং করে ব্যাচমেট বন্ধুবান্ধব এবং গ্রুপের বাইরে আত্মীয়, শুভাকাঙ্খী, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় একটা ফান্ড গঠন করে তা দিয়ে শুকনো খাবার, ঔষধ, নতুন জামাকাপড় এবং বন্যার্তদেরকে একবেলা রান্না করে খাবারের আইটেম নিয়ে ৬ সদস্যের একটা টীম গঠন করে ছুটে যায় বন্যা কবলিত এলাকা লক্ষ্মীপুরে।
সেখানে সদর আলীয়া মাদ্রাসায় প্রায় এক সপ্তাহ অবস্থান করে স্থানীয় এক যুবক নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং তার একটা টীমের (স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র) সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি লক্ষ্মীপুরের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে একদম প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় (যেখানে কেউ ত্রাণ নিয়ে যায়নি এমনকি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণ গিয়েছে) সেই ভোর থেকে শুরু করে রাত ১২-১ টা পর্যন্ত রোদ বৃষ্টিতে ভিজে, মাইলের পর মাইল হাটু পানি কোমড় পানি মাড়িয়ে ঘাড়ে করে মাথায় করে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে।
শিশু বাচ্চাদের খাবার ল্যাকটোজেন, সুজি, গুড়ো দুধ ও চিনিসহ প্রায় ১৩০ পরিবার, শুকনো খাবারের ২৭০টি ফ্যামিলি পার্সেল, ছোট বাচ্চা ও নারী পুরুষসহ ৭০০ জনের মাঝে নতুন জামাকাপড় বিতরণ এবং সবশেষে ৮০০ মানুষের মাঝে রান্না করে খাবার (সাদা ভাত, চিকেন রোস্ট, ডাল) বিতরণ করে এই সংগঠনটি। এই কয়দিন কাজ করতে যেয়ে ঠিকমতো তাদের ৩ বেলা খাওয়া হয়নি, কাজের নেশায় ডুবে কখনো ২ বেলা অথবা একবেলা কোনমতে খেয়ে কাজ করতে হয়েছে। খালি পায়ে ময়লা আবর্জনা পানি মাড়িয়ে রাত ১২-১টা পর্যন্ত বিরতিহীন কাজ করে টীমের সবাই প্রায় অসুস্থ, ইনজুরি হয়ে যায়। তবুও থেমে ছিলনা তাদের এই স্বেচ্ছাশ্রম, স্বেচ্ছাসেবা ও মানবপ্রেম।
রমজান মাহমুদ রানা ও এস এম মিজানুর রহমান মামুনের সমন্বয়ে গঠিত ৬ সদস্যের এই টীমে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আরও ছিলো নুরুল কাদের সোহেল, শেখ মোহাম্মদ মিনহাজ, মো: রুবেল মিয়া এবং মো: রানা।