কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের সর্বশেষ জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। এ জেলার ব্র‍্যান্ড নাম হলো “উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর মাছে ভরা”। কিশোরগঞ্জ ঢাকা বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। হাওর অঞ্চলের জন্য কিশোরগঞ্জ বিখ্যাত।

ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা ‘কিশোরগঞ্জ’-এর উৎপত্তি হয়।

এই জেলার উত্তরে নেত্রকোণা জেলা ও উত্তর-পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে নরসিংদী জেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা ও হবিগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা ও গাজীপুর জেলা অবস্থিত।

কিশোরগঞ্জের ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৯ বর্গ কিলোমিটার। এ জেলায় উপজেলা আছে ১৩টি। এগুলো হলো:- অষ্টগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদি, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, তাড়াইল, নিকলী, পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর, ভৈরব, মিঠামইন এবং হোসেনপুর। এছাড়াও এ জেলায় ৮টি পৌরসভা এবং ১০৮টি ইউনিয়ন রয়েছে।

ঢাকা থেকে এ জেলায় সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ করা সম্ভব।

এ জেলায় যেসব নদী আছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, কালনী, ধনু, নরসুন্দা, বাউরি ও ঘোড়াউত্রা।

কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির চালিকা শক্তি অনেকটা হাওরের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া কিশোরগঞ্জে পাট, ধান এবং অন্যান্য অনেক সবজি হয়ে থাকে যা দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়। এছাড়া ভৈরব এর জুতা শিল্প দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য।

এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান হলো:- জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ছিল বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁর দ্বিতীয় দুর্গের ভিতরে ঈসা খাঁ কয়েকটি স্থাপনা গড়ে তোলেন। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে দুর্গের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এগারসিন্দুর দূর্গ, ইতিহাসবেত্তা আবুল ফজল রচিত আকবরনামা গ্রন্থে এই গ্রামের নাম উল্লেখ রয়েছে। এটি ছিল অহম শাসকদের রাজধানী। ১৫৩৮ সালে মুঘলরা অহমদের পরাজিত করে এ অঞ্চল দখল করে। এখানেই ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৬ দশমিক ৬১ একর জমিতে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদী মসজিদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত আধুনিক স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন “শহীদী মসজিদ”। এ মসজিদটি এ অঞ্চলের ইতিহাসের এক বিরল নিদর্শন।

চন্দ্রাবতী মন্দির, চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত প্রথম বাঙালি মহিলা কবি স্মৃতিবিজরিত শিবমন্দির।

দিল্লীর আখড়া, দিল্লীর আখড়া মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে নির্মিত। এটি মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত।

,মানব বাবুর বাড়ি, মানব বাবুর বাড়ি হোসেনপুর উপজেলায় অবস্থিত। ১৯০৪ সালে জমিদারির পত্তন হলে ব্রিটিশ জেপি ওয়াইজের কাছ থেকে জমিদারি কিনে নেন গাঙ্গাটিয়ার ভূপতিনাথ চক্রবর্তী। সেখানেই তিনি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।

“সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু”

“তালজাঙ্গা জমিদার বাড়ি”, তালজাঙ্গা জমিদার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। তালজাঙ্গা জমিদার বাড়িটি প্রায় একশত বৎসর আগে জমিদার বাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার রাজ চন্দ্র রায়।

“নিকলীর বেড়িবাঁধ”, নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। পানিতে দ্বীপের মত ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের খেলা, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা সম্বলিত এলাকা হলো নিকলীর বেড়বাঁধ।

এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- “সারদারঞ্জন রায়”- অবিভক্ত বাংলার ক্রিকেটের জনক―প্রবাদ পুরুষ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেটের অন্যতম অগ্রদূত। তাঁকে বাংলা ক্রিকেটের ডব্লু জি গ্রেস নামে অভিহিত করা হয়।

“আতহার আল”, ইসলামি পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ, “আব্দুল হামিদ”, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও রাজনীতিবিদ। “কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন”, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। “দ্বিজ বংশী দাস”, মনসামঙ্গলের কবি চন্দ্রাবতী, প্রথম বাঙালি মহিলা কবি। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, লেখক, চিত্রশিল্পী। সুকুমার রায়, কবি, গল্প লেখক ও নাট্যকার। ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব। মনির উদ্দীন ইউসুফ, বিখ্যাত ফার্সীগ্রন্থ শাহনামা অনুবাদক। সত্যজিত রায়, একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় চলচ্চিত্রকার।সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭১ সালে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। আইভি রহমান, একজন সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন রাজনীতিবিদ। ওসমান ফারুক, রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। মো: মোজাম্মেল হোসেন, ২০ তম প্রধান বিচারপতি। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী। নূর মোহাম্মদ (আইজিপি), সাবেক আইজিপি ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য।ইলিয়াস কাঞ্চন, ঢাকাই চলচ্চিত্রের দর্শকনন্দিত নায়ক। প্রফেসর ড: গওহর রিজভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা। আবদুল মোনেম খান, পূর্ব পাকিস্তানের সবেক গভর্নর। নাজমুল হাসান পাপন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি।সায়মন সাদিক, চলচ্চিত্র অভিনেতা।

এছাড়াও এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker