গত দের মাসে পরপর কয়েকটি ডাকাতি ঘটনায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রতি রাতেই উপজেলার কোনো না কোনো বাড়িতে, আঞ্চলিস সড়ক ,মহাসড়কে ছিনতাই, ডাকাতি হচ্ছে।
এসব ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।প্রতিরাতেই পুলিশ টহল থাকলেও ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলছে হরহামেসাই ।
শনিবার ভোরে উপজেলার কালিয়াকৈর টু মাওনা আঞ্চলিক সড়কের বাগচালা এলাকায় ভোর ছয়টার দিকে পিকাআপ ভ্যানে করে ৭/৮ জন ডাকাত দলের সদস্যরা অটোরিকসায় থাকা কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ীদের গতিরোধ করলে অটোরিকসাটি সড়কের পাশে ক্ষাদে পড়ে যায় ।এসময় ব্যাবসায়ীদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা ।
ব্যাবসায়ীরা মাছ কিনার জন্য কালিয়াকৈর বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন ।এদিকে শুক্রবার রাতে সফিপুর বাজার এলাকার ব্রাক ব্যাংক থেকে ৪১ টি ল্যাপটব কম্পিউটার নিয়ে যায় ডাকাতরা ।এদিকে প্রতিরাতেই পুলিশ টহল থাকলেও ঠেকানো যাচ্ছেনা ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ।অপরদিকে ডাকাতির ঘটনায় রাত হলেই বাড়ছে আত্বঙ্ক ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের নাবির বহর এলাকায় সৌদি আরব প্রবাসী নুরু মিয়ার বাড়িতে হানা দেয় ডাকাতরা। প্রতিবেশীদের ভাষ্য, এদিন রাত ২টার দিকে বাড়ির উটার পশ্চিম পাশের সীমানা দেয়াল টপকে ছয়-সাতজন ডাকাত ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে তারা প্রধান ফটকের তালা কেটে ঘরের ভেতরে যায়।
ঘরে ঢুকেই তারা নুরু মিয়ার স্ত্রী, বড় মেয়ে ও মেজ মেয়ের হাত- পা বেঁধে ফেলে। পরে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, একটি আইফোনসহ দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার করে।
একই রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চান্দরা এলাকায় বাসে ডাকাতি হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে। বিষয়টি টের পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ সদস্যরা বাসটি আটক করেন। এ সময় তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলো- রাজিব মন্ডল (২৫), আব্দুল আলীম (২০), ফারুক হোসেন (২২)। তবে তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত মালপত্র এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে কালিয়াকৈর পৌরসভার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মঞ্জুরুল করিম সোহাগের বাড়িতে হানা দেয় ডাকাতরা। তিনিসহ পরিবারের চার-পাঁচজন সদস্যকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে ফেলে। পরে নগদ ৩২ লাখ টাকা, ২৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় কোটি টাকার মালপত্র লুট করে ডাকাত দলের সদস্যরা ।
দেওয়ান মঞ্জুরুল করিম সোহাগ বলেন, রাত ২.৩০ মিনিটের দিকে বাড়ির সীমানা দেয়ালে থাকা কাঁটাতার কেটে ছয়- সাতজন ডাকাত ভেতরে ঢুকে পড়ে।
তারা পেছন দিক থেকে একটি মই দিয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। পরিবারের সদস্যদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় এক কোটি টাকার মালপত্র লুট করে। এক কোটি।
এদিকে, ২ ডিসেম্বর সফিপুর বাজারে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম (৪৩)। দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। সাইফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সংবাদ পেয়ে সাইফুলের স্বজনরা তাঁকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সফিপুর রঙ্গারটেক এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সফিপুর বাজারের পশু হাটের কাছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি ।
অপরদিকে গেল ১৩ নভেম্বর উপজেলার ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের সূত্রাপুর এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কম্বল ভর্তি কভার ভ্যান সহ মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা ।
পরে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ৪ জনসহ মালামাল উদ্ধার করে ।এদিকে একই মাসের ২৬ নভেম্বর উপজেলার সফিপুর বাজার রুপনগর এলাকা থেকে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের উড়াল সেতুর মাথা থেকে রট ভর্তি ট্রাক ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাতরা ।