কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গরু চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। গরু চুরি ঠেকাতে গরুর মালিকরা প্রতিরাতেই জেগে গোয়াল ঘর পাহারা দিচ্ছেন। উপজেলা জুড়েই গত এক মাস ধরেই গরু চুরি আতংকে রয়েছে কৃষক ও গরুর মালিকরা। সচেতন মহল বলছেন, গত একমাস ধরে গরু চুরি আর সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। পুলিশ রাতে এক বা দুইবার টহল দিলেও কোনক্রমেই গরু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও গরুর মালিকরা জানান, উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের ফকিরচালা, লস্করচালা, রায়েরচালা বড়ইবাড়ি, মধ্যপাড়া, বৈরাগিচালা, মাটিকাটা ও ঢালাজোড়া ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কিছু লাভের আশায় চারটি, পাঁচটি আবার অনেকে বেশি করে গরু লালন পালন করেছেন। এসব গরু পালন করে এবারের ঈদে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফলে এসব এলাকাকে গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে আশঙ্কাজনক ভাবে। প্রতিরাতেই কারো না কারো বাড়িতে গরু চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটছে।মাধ্যপাড়া ইউনিয়নের বৈরাগিচালা এলাকার বাসিন্দা তুষার মিয়া জানান, এদিকে একদল সংঘবদ্ধ চোরের দল গত ১৫ দিনে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কমপক্ষে অর্ধশত গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খিতিশ চন্দ্রের প্রায় দেড় লাখ টাকা হবে ১টি ষাড় গরু, জহিরুলের দুই লাখ টাকা ১টি ষাঁড়, ওরশন আলীর ২টা, জাহাঙ্গীর আরমের ৩টি ও সেলিনা বেগমের ৩টি গরু রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে গেছে গরু চোরের দল।
ওই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মাসে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রাম থেকে অন্তত ৫০টি গরু চুরি হয়েছে। কিন্তু চোর ধরা পড়ছে না। ফলে গরুর মালিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বাগানবাড়ি এলাকার বদুর উদ্দিন বলেন, গত পহেলা জুন সন্ধ্যায় গরু গোয়াল ঘরে রেখে বাহিরে তালা দিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে দেখি গোয়াল ঘর থেকে তিনটি গরু নাই। অনেক কষ্ট করে গরু তিনটি পালন করেছিলাম।
মৌচাক ইউনিয়নের কালিয়াদহ গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন কোরবানি ঈদকে উপলক্ষেকরে চারটি গরু দীর্ঘদিন আগে ক্রয় করে লালন পালন শুরু করেন। ঈদেও আগে গরুগুলি বিক্রি করার কথা ছিল। গত মে মাসের শেষ সাপ্তাহে গভীর রাতে একটি সংঘ বদ্ধ চোরের দল গরুগুলো নিয়ে যায়। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, চুরি হওয়া চারটি গরুর আনুমানিক মূল্য সাত লাখ টাকা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়লাম।
মধ্যাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, গত তিন রাতে কামারচালা এলাকার আফাস উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের চারটি গরু চুরি হয়েছে। এ ছাড়া বাগানবাড়ি এলাকার বদুর উদ্দিনের তিনটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ঈদের আগে এমনভাবে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় গরুর মালিক কৃষকরা আতংকে রয়েছেন। তারা সারা রাত জেগে দিচ্ছেন গোয়ালঘর পাহারা।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে কিভাবে গরু চুরি বন্ধ করা যায়, সেই কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীকে সম্পৃক্ত করে পাহারা দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।