কালিয়াকৈর

কালিয়াকৈরে রাতভর নির্যাতন করে অটোচালক হত্যার ঘটনায় ৯ দিনেরও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ভাতারিয়া গ্রামে নরুল ইসলাম (৩৫) নামের এক অটোচালককে ছিনতাইকারীর অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে ও ফাঁসি দিয়ে হত্যা করার অভিযুক্তদের পুলিশ গত ৯দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে নিহতের স্ত্রী রুপালী খাতুন স্বামী হত্যার সাথে জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবী জানান।

এঘটনায় নিহতের ছোট ভাই আসলাম হোসেন বাদী হয়ে কবীর সিকদার (৫০) নামের একজনকে আসামী করে আরো অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামী করে ঘটনার দুইদিন পরে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এঘটনাটি তদন্ত ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব এসআই হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি গত ৯দিন গেলেও কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এ হত্যাকান্ডটি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তি ও স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী উঠে পড়ে লেগেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এামলার সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল নুরুল ইসলাম নামের এক অটোচালক মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকার মোঃ আলীর একটি ভাড়া কক্ষ থেকে কোন এক বাসা থেকে বের হন।

সেই রাতে নুরুল ইসলাম তার স্ত্রীকে ফোনে জানায়, তিনি একসিডেন্ট করেছেন। তাকে কোন চিন্তা না করতে বলেন। ফোনে কথা বলার পর নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন ২৬ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে কালিয়াকৈর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের স্ত্রী রুপালি খাতুনকে জানান, তার স্বামী ফাঁসিতে ঝুলে মারা গেছেন।

এ ঘটনাটি স্থানীয় কয়েকজন মাতাবর, পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ধামা চাপা দেওয়ার জন্য দেনদরবার করে ছিনতাইকারী বলে চালিয়ে দেন। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান। মামলায় অভিযুক্ত অটোরিকসার মালিক কবীর হোসেন সিকদার বলেন, আমার ছেলে রনি হোসেনের একটি অটোরিক্সা ছিনতাইকারীকে নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ তাকে না রেখে তার চিকিৎসা করানোর জন্য আমাদের চাপ দেন।

নুরুল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে, সেখানকার চিকিৎসক শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য বলেন। পরে আমরা নুরুল ইসলামকে ভাড়ারিয়া গ্রামে আব্দুল কাদের মিয়ার বাড়ীতে নিয়ে যাই। সেখানে সারারাত পাহারা দেওয়ার এক পর্যায় নুরুল ইসলাম একটি কক্ষে ঢুকে ফ্যানের সাথে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা হত্যা করে।

নুরুল ইসলাম মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকায় মোঃ আলীর বাড়ীর একটি কক্ষে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় অটোচালক ছিলেন। স্ত্রী রুপালী খাতুন স্থানীয় একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। তাদের সংসারে ছোট দুইজন ছেলে সন্তান রয়েছে। নিহত নুরুল ইসলাম হলেন,গাইবান্ধা সদর জেলার মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

নিহতের স্ত্রী রুপালি খাতুন কন্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করি। অল্প বেতন পাই। আমা স্বামীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে রাতভর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। আমার স্বামীকে যারা রাতভর নিযার্তন করে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।

অটোচালক নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, এজাহারে উল্লেখিত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করছি। তবে এই মামলাটির আসামী না ধরতে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীও চাপে রেখেছেন। মামলাটি পিবিআইকে দিয়ে দিলে হয়তো, নুরুল ইসলাম হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রæত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker