গাজীপুর

কালিয়াকৈরে সারা বছর খবর নেই শুধু মৎস্য সপ্তাহ এলে জাল পুড়ায়

সারা দেশের মতো গাজীপুরের কালিয়াকৈরেও চলছে সাতদিন ব্যাপী মৎস্য সপ্তাহ। এ মৎস্য সপ্তাহকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর তোরজোর বাড়ে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের। এর ধারাবাহিকতায় এবারের মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে বিলে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ সময় কিছু মৎস্য শিকারীকে আটকের পর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

এলাকাবাসী, মৎস্যজীবি ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তুরাগ, বংশাই, ঘাটাখালি, গোয়ালিয়া নদী এবং বিভিন্ন খাল-বিলে অবৈধ কারেন্ট ও চায়না জাল ও ইলেকট্রিক সর্ট দিয়ে মৎস্য শিকার করে আসছে মৎস্যজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ। বর্ষা মৌসুমে এসব অবৈধ জাল ও ইলেকট্রিক সর্ট মেশিন দিয়ে মাছ শিকার করার দুম পড়ে সবচেয়ে বেশি। মৎস্য শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পায় না এসব নদী ও বিলে সংরক্ষিত মাছের অভয়াশ্রমও। বিভিন্ন ভাবে মৌখিক অভিযোগ জানালেও সে সময় অলস নির্বিকার সময় পাড় করে মৎস্য দপ্তরের কর্মকতার- কর্মচারীরা। ওই সময়ে মাঝে মধ্যে দু-একটি লোক দেখানো অভিযান চালালেও তা একেবারেই অপ্রতুল। এছাড়াও অভয়াশ্রমগুলো রক্ষায় স্থানীয়ভাবে এলাকা ভিত্তিক বেশ কিছু কমিটি করা হলেও মৎস্য রক্ষায় তারা কোনো কাজে আসছে না। এসব কমিটির সদস্যরা শুধু বষার্ মৌসুমে মাছ ধরতে গেলে মৎস্যজীবিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। চাঁদা আদায়ের বিষয়ে বিভিন্ন সময় মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই চাঁদার ভাগ মৎস্য দপ্তরেও যায়। যারকারণে তারাও নিরব ভুমিকা পালন করেন। সারা বছর অপরিকল্পত ভাবে শিকারীরা মা মাছ, পোনাসহ মাছ শিকার করায় বিভিন্ন
প্রজাতির দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। শুধু মৎস্য সপ্তাহ এলেই যেন এ দপ্তরের তোরজোর বাড়ে। সারা দেশের মতো এখানেও গত ২৩ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলছে সাত দিন ব্যাপী
মৎস্য সপ্তাহ। এ সাত দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচী থাকলেও নাম মাত্র কর্মসূচী পালন করছে মৎস্য দপ্তরটি। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের মেদীআশুলাই আলোয়া বিলে অভিযান চালায় উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ’র নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৫০টি চায়না জাল ও ২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। পরে ওই জব্দকৃত জালগুলো আগুনে পুড়ানো হয়েছে। এসময় অপরাধী কিছু মৎস্য শিকারীকে আটকের পর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা মৎস্য দপ্তরের ক্ষেত্র সহকারী মোসলেম উদ্দিন, কালিয়াকৈর থানার এসআই আলাউদ্দিনসহ
মৎস্য দপ্তরের অন্যান্যরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছর মৎস্য অফিসের কেউ কোনো খোঁজ-খবর রাখে না। বিভিন্ন কারণে মৎস্য খামারের মাছ মারা সে সময় তাদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এখন মৎস্য
সপ্তাহ চলছে, আর তাদের লোক দেখানো কর্মসূচী চলছে। তবে মৎস্য অফিসের আরো জোরালো ভুমিকা পালনের দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার দাবী জানান স্থানীয়রা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকতার্ সলিমুল্লাহ জানান, মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন, র‍্যালী, পোনা অবমুক্তকরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে অবৈধ চায়না ও কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে কোনো মৎস্য শিকারীকে আটক করা হয়নি। এছাড়া জনবল ও অর্থ সংকটের কারণে আমরা ঠিকমতো অভিযান চালাতে পারি না। অনেক সময় নিজেরপকেটের টাকা খরচ করে অভিযান চালালেও স্থানীয়ভাবে কোনো সহযোগীতা পাই না।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker