সদরপুরের বিস্তীর্ণ চরটি এখন কাশফুলের সাদা বিছানা
পদ্মার বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরে কাশফুল তার সাদা চাদর বিছিয়ে রেখেছে। চোখ ধাঁধানো দিগন্ত জোরা কাশবন প্রকৃতি প্রেমিদের মনকে প্রশান্তির ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছে।
আর শরৎ মানেই যে আকাশে নরম পেঁজা তুলোর মতো শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানো আর দিগন্তজোড়া প্রান্তরে কাশফুলের মনোরম দৃশ্য।
ফরিদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব। সদরপুর উপজেলার ২নং আকোটের চর ইউনিয়নের আকোট বাজার সংলগ্ন একটি চর। বিশাল এই চরজুড়ে ছেয়ে গেছে কাশবন। সাদা রঙের কাঁশফুলে ভরে উঠেছে কাশবন। দূর থেকে দেখে মনে হবে বিশাল আকৃতির সাদা বিছানা চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। যা জেলার আর কোথাও এতো বড় কাশবন খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ যতদূর চোখ যায় শুধু কাশবন আর কাশফুল। গ্রাম কিংবা শহরের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তির মায়াবি আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে দিগন্তজোড়া কাঁশফুল। সেই কাঁশফুলের রাজ্যে গাঁ ভাসাতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছে। ছবি আর সেলফি তুলে স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরাবন্দি করছে নিজেদের।
যেভাবে যাবেন, সদরপুর সদর থেকে মনিকোঠাবাজার হয়ে সরাসরি এক রাস্তা আকোটেরচর বাজার। যারা নিজেদের বাইকে যাবেন অথবা একটু কম সময়ে যেতে চাইলে শর্টকাট যেতে পারেন, ফরিদপুর সদর থেকে প্রথমে গজারিয়া বাজার, তারপর হাট কৃষ্ণপুর বাজার, বাজারের ভেতর দিয়ে যেতে হবে ভাষানচর নতুন বাজার, এরপর জয়বাংলা বাজার, এরপরে, জামতলা বাজার, খেজুরতলা বাজার, গাবতলা বাজার, মণিকোঠা বাজার, আকোটের চর বাজার, নদী পার হলেই গুচ্ছগ্রাম তার একটু সামনেই কাশবন।
বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকটি টিমসহ বন্ধু বান্ধাব ও পরিবার নিয়ে অনেকেই ঘুরে আসা, তাদের মুখে গল্প শুনে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে জেনে প্রতিদিনই অনেক মানুষ ঘুরতে বা দেখতে যাচ্ছেন এই কাশফুল। ঘুরতে গিয়ে প্রত্যেকেই যেন নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মাঝে।
ঘুরতে আসা অনেকেই জানান, কালের পরিক্রমা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফরিদপুর থেকে হারাতে বসেছে শরতের কাশফুল। একটা সময় ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় কাশবনের কাশফুলগুলো দোল খেতো মৃদু বাতাসে। এখন ফরিদপুরের গ্রাম-গঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমি ফসলের ক্ষেত।
এ কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজনও নেই। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি, দোন তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। পদ্মার চর এলাকাসহ ফরিদপুরের কিছু নদী এলাকায় কাশবন দেখা যায়। তখন মানুষ নিজের অজান্তে হারিয়ে যায়। অতীত হাতড়ে থাকে।
কাশবনে ঘুরতে আসা অনেকেই জানান, শহরের কোলাহল আর কেমন যেন হয়ে গেছে। তাই দূরত্ব হলেও বিকেলটা ভালোই কেটেছে। এখানে না এলে বোঝা যাবে না। অন্যরকম অনুভূতি। মন ভরে ওঠে, মুগ্ধ হয়ে যায়। কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় আর আবেশে মনটাও যেন নরম হয়ে যায়।
অকোটেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জানান, এটা একটা বিশাল চর এলাকা। বালু চরে কোনো ফসলাদিও হয় না। এ চরে কেউ কাশবন চাষ করেননি। পরিচর্যাও করা লাগেনি। নিজ থেকেই চরজুড়ে কাশবন-কাশফুলে ছেয়ে গেছে। কাশফুল দেখতে প্রতিদিন দূর দূরান্তে থেকে বিভিন্ন বয়সীর মানুষ ছুটে আসছে প্রতিনিয়ত।