ফরিদপুর

চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর খনন করা ড্রেজিং বালু বিক্রিতে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর নাব্যতা রক্ষায় খনন করা (ড্রেজিং) বালু বিক্রিতে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মেহেদী মোর্শেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য ‍মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত এক ঠিকাদারের কারসাজির মাধ্যমে এই অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে উপজেলার গোপালপুর ঘাট থেকে মৈনট ঘাট পর্যন্ত পদ্মা নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পরে তা খাসজমি না থাকায় জেলা ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সাবকমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোপালপুর ঘাটসংলগ্ন ব্যক্তিমালিকানা জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। তাতে বিনা মূল্যে ভরাট করার জন্য জায়গা দেন ওই এলাকার সদর মোল্যা ও গঞ্জর মোল্যা। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও ইউএনও মো: মেহেদী মোর্শেদ।

জানা গেছে, ‘স্তূপ করা বালু নিক্সন চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় মেসার্স আর আর ট্রেডার্সের ঠিকাদার মো: শাহিনুজ্জামান (শাহিন বাছার) তৎকালীন ইউএনও মেহেদী মোর্শেদের যোগসাজশে দখলে নেন। এরপর গোপনে নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনো কার্যাদেশ ছাড়াই বালু বিক্রি শুরু করেন। আর তাতেও দেওয়া হয়েছে রাজস্ব ফাঁকি। নিলামে বালুর পরিমাণ কম দেখানো হয়।

ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল পরিমাণ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৭ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে এবং উচ্চতা ৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ৬৫০ ফুট ও প্রস্থ ২২০ ফুট উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে ওই বালুর পরিমাণের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বালু দেখা গেছে।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখিত হার দেখিয়ে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারকে উক্ত বালুর জন্য ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা জমার নির্দেশ দেন তৎকালীন ইউএনও। দুই দিন পরে উপজেলা সদরের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শাখায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক শাখায় ৩ লাখ টাকা দুটি চেকের মাধ্যমে ইউএনওর ব্যাংক হিসাবে পরিশোধ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এই টাকা রাজস্ব খাতে জমা হয়নি। এর পর থেকেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু বিক্রি শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। পরে ২৯ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওই ইউএনও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান।

সে সময় কোনো টাকা জমা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তৎকালীন ইউএনও মেহেদী মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘আমি থাকাকালে বালু বিক্রির কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আমার কাছে টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম নেই। ঠিকাদার ওই টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দেবে। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ কার্যাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী ও জেলা ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আব্দুর সবুর খান বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের বালুর সব দায়িত্ব ইউএনওকে বুঝিয়ে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। একমাত্র ইউএনওর কাছেই টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কোনো টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। এ ছাড়া ইউএনওর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূল্যায়ন প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছিলাম।’

এদিকে সরকার পরিবর্তনের পরেই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহিনুজ্জামান। এরপর বন্ধ হয়ে যায় বালু বিক্রির কার্যক্রম। কয়েক দিন আগে ফিরে তিনি পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেন।

এ বিষয়ে বর্তমান ইউএনও মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম বলেন, বালু ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি আগের ইউএনও ভালো বলতে পারবেন।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমি সঠিক প্রক্রিয়ায় বালু বিক্রির কাজ পাই। প্রথমবার টাকা দিয়ে বালু বিক্রি শুরু করি। কিন্তু সেই টাকা অন্য একটি কোডে জমা হয়েছিল, পরে তা ফিরিয়ে এনে নতুন করে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বোঝেনই তো, অনেক খরচ আছে। যে কারণে বালুর পরিমাণ একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে।’

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াছিন কবির বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker