চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রাউজানে মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম সিদ্দিকী’র’ কু-কৃত্তি-১

চট্টগ্রামের রাউজান হলদিয়া উত্তর সর্তা গ্রামে জহুর থেকে মুক্তি যোদ্ধা জহুরুল ইসলামের কু-কৃত্তির সীমা ছাড়িয়েছে। পরিবার থেকে সমাজ, পাড়া থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহর, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলামের কুপ্রভাব পড়েনি। মুক্তিযোদ্ধার দাপট দেখিয়ে একের পর এক কুু-কাম করলেও সাহস করে প্রতিবাদ করতে পারেনি কেউ।

যারা সনদধারী এই মুক্তিযোদ্ধার কু-কাজের প্রতিবাদ করেছন তাদের ভাগ্যে জুটেছে মিথ্যে মামলা ও থানা পুলিশের নানা হয়রানি। এলাকা সুত্রে জানা যায়, জহুর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম সিদ্দিকী নাম ধারণ করা লোকটি একজন প্রতারক, ভন্ড, খুনী, নারী লোভী, দখলবাজ ও মামলাবাজ।

এলাকা বাসীর তথ্য মতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতারক জহুরুলের তেমন কোন ভুমিকা না থাকলেও আওয়ামী সরকারের আমলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সুচতুর জহুর অর্থের বিনিময়ে বনে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম সিদ্দিকী।

এরপর থেকে শুরু হয়ে যায় তার প্রতারণা, জায়গা দখল, ভুমি দস্যুতাসহ এলাকার মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জোর জবরদস্তি জায়গা দখলসহ নানান কু-কর্ম। তার এই দখল ও প্রতারণা থেকে রক্ষা পায়নি তার আপনজন, আত্মীয় স্বজন, এমনকি তার বোন, বোনের সন্তান ও তার আপন বড় ভাইয়ের স্ত্রী, পুত্র। তাদের সহায় সম্পত্তিসহ সবকিছুই কেড়ে নেই এই প্রতারক মুক্তিযোদ্ধা জহুর।

তার জবর দখলের প্রথম শিকার তার আপন বড় ভাই মরহুম নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলাম বিদেশ থাকতেন ছোট ভাই হিসাবে এই জহুরকে তার সম্পত্তিসহ সব কিছু দেখাশুনার দায়িত্ব দেন। কিন্তূ এই সুচতুর চালাক প্রতারক জহুর ওরফে মুক্তি যোদ্ধা জহুর ইসলাম সিদ্দিকী তার ভাইয়ের পাঠানো টাকা পয়সা দিয়ে তার নামে সব কিছু করা হয়েছে বলে এক‌টি দলিল দেখায়।

পরবর্তীতে মরহুম নুরুল ইসলাম বিদেশ থেকে এসে যখন সব কিছুর হিসাব নিকাশ দেখতে চায়, তখনই ফুটে উঠে এই জহুরের প্রতারণার আসল চিত্র। তখনই সু কৌশলে ষ্টেশন রোডে অবস্থিত হোটেল মার্টিন ও নিউ মার্কেট এর দোকান দখল করে নেন এই প্রতারক জহুর। পরবর্তীতে মরহুম নুরুল ইসলাম আইনের আশ্রয় নিলে তার উপর চলে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিভিন্ন রকম মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসী হামলা, জবর দখলসহ বিভিন্ন রকমের খড়ক। এলাকা বাসী এই ব্যাপারে কথা বললে তাদের অনেককে ও মিথা মামলার ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেন। তাই সাহস করে কেউ আর তার ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ।

কিছু দিন আগে তার আপন বড় ভাইয়ের স্ত্রী তার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে একটা সংবাদ সম্মেলন করেন। এই বয়স্ক মহিলার উপর নির্মম নির্যাতন ও তাদের পরিবারের উপর নির্যাতন লৌমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেন, সংবাদ সম্মেলন করার কারণে এই মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীরসহ তার ছেলেদের বিরুদ্ধে মানহানিসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে তাদেরকে বাড়ি ছাড়া করে দিয়ে পরে তাদের বাড়ি ঘেঁষে রাতারাতি দুইটি দেওয়াল নির্মাণ করে জায়গা দখল করে নেন। যাতে তাদের যাতায়াতের অসুবিধা হয়।

এই সব বিষয়ে জানতে চাইলে বয়োবৃদ্ধা এই নারী নুর বানু বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে এই মুক্তিযোদ্ধা জহুরুলের তাদের সাথে ঘটে যাওয়া বিভৎস ঘটনা গুলো বর্ননা দেন এবং তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আশপাশের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েও কোন সুরাহা পাইনি বরং তারা উল্টো এই জহুরুলের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আমার ও আমার ছেলেদের জন্য করা মামলায় আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রদান করেন পুলিশের কাছে, জসিম, সরোয়ার ও বেদার। এখনো প্রতিনিয়ত আমাকে ও আমার ছেলেদের মিথ্যা মামলা ও জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। সরোয়ার বেদার ও জসিমের মাধ্যম দিয়ে ও বিভিন্ন ভাবে। এখন আর কার কাছে বিচার চাইবো এই জুলুমের এখন আল্লাহর কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।

এই ব্যাপারে স্বাক্ষীদের কাছে জানতে চাইলে সরোয়ার বলেন, আমি কিছুই জানিনা, বেদার বলেন, আমাকে জোর করে স্বাক্ষী দেওয়া হয়েছে, স্বাক্ষী না দিলে আমাকে ও এদের মত বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিল তাই দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, সেই মুক্তিযোদ্ধার সাটিফিকেটও পয়সা দিয়ে বানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলনা এবং বিগত সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার যাচাই বাচাই কমিটির লিষ্ট থেকে নাম বাদ গেলে পরে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে গিয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তালিকায় নাম লিখান।

স্হানীয় এক মুক্তিযোদ্ধা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,যদি সঠিক ভাবে তদন্ত করা হয় তাহলে অবশ্যই আমি শতভাগ নিশ্চিত সেই একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রমাণিত হবে। সেই এই মুক্তিযোদ্ধার সাটিফিকেট পাওয়ার পর থেকে এমন কোন অপকর্ম নাই যা তিনি করেন নাই।

তিনি আরো বলেন, এইসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যদি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না হয়, তাহলে লাখ শহীদদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম একজন নারী লোভী ও পতিতা ব্যাবসায়ী ছিলেন। তার নিয়ন্ত্রিত ষ্টেশন রোডে হোটেল মার্টিনে দেহ ব্যাবসা করত। যা বিগত কিছু দিন আগে ও বিভিন্ন স্হানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

এই মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম একাধিক বিয়ের নামে প্রতারণাও করেছেন অনেক মেয়ের সাথে। শাবনুর নামে এক মেয়েকে বিবাহ করেন ০৪/০৮/২০১১ইং তারিখে সেই এত লোভী ছিল যে পরে বিভিন্ন সময় তার বিবাহিত স্ত্রী কে বিভিন্ন সময় মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে সেই সহ্য করতে না পারলে, ২০১৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন, মামলা নং ৮২২/২০১৩।

এলাকাবাসী মনে করেন, এখন তার বিচার হওয়া উচিত। তার এই সব অপকর্মের প্রধান হোতা তার ম্যানেজার রুবেল নামের একজন, সেই ও নারী পাচারকারী। জহুরুল ইসলামের সব মিথ্যা মামলার সব জায়গায় স্বাক্ষী, এই রুবেল। এই রুবেলের নামে ও একাধিক মামলা রয়েছে। 

সেই একজন নারী সাপ্লয়ার, বিভিন্ন জনকে ম্যানেজ করার জন্য সেই অনেক কে নারী মদ ও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুলের ম্যানেজার যায় আর আসে কিন্তু এই রুবেল রয়ে যায়, কারন তার সব অপকর্মের স্বাক্ষী এই রুবেল।

এই মুক্তিযোদ্ধা জহিরুলের নামে নারী নির্যাতন জবর দখল ডাকাতি ও সর্বশেষ গত ৫ই আগষ্ট নিউ মার্কেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নসাৎ করার জন্য আওয়ামী লীগকে নগদ অর্থ প্রদান ও বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করায় তার নামে কোতোয়ালী থানায় মামলা হয়। এই ছাড়াও কোতোয়ালীতে ম্যানেজার রুবেল ও তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

এই সব বিষয়ে প্রতিবেদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুলকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে জানতে চাইলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাই। পরে তার কথিত ম্যানেজার রুবেলকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাহেব অসুস্থ আছেন ঢাকায়। দুই এক দিনের মধ্য আসলে আমি কথা বলায় দিব বলেন। কিন্তূ একসাপ্তাহ পরে আবারও ফোন দিলে এই ম্যানেজার রুবেল বলেন উনি গনমাধ্যমের সাথে কথা বলবেন না। তার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন আমাকে টাকা দেয় আমি কাজ করি। আর কিছু বলতে পারবেনা বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন। এই মুক্তিযোদ্ধার আর ভয়াবহ গা শিউরে উঠার মত লৌহমর্ষক কাহিনী জানতে ২য় পর্বে চোখ রাখুন,,,, চলবে,,,,

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মোহাম্মদ ইসমাইল (ইমন), স্টাফ রিপোর্টার

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker