চট্টগ্রাম

স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে দুই ভাইয়ের অর্থপাচার, গোপনে ভারতে পালানোর চেষ্টা

চট্টগ্রামের স্বনামধন্য মিমি সুপার মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মন্দিরা জুয়েলার্সের মালিক রাজেস তলাপাত্র এবং রাকেশ তলাপাত্র দুই আপন ভাই মিমি সুপার মার্কেটে স্বর্ণ ব্যবসাকে পুঁজি করে সাধারণ গ্রাহক হতে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে এই প্রতারক দুই ভাই এখন লাপাত্তা।

জানা যায়, রাজেস এবং রাকেশের পিতার নাম রনজিত তলাপাত্র। তারা চট্টগ্রামস্থ লাভলেইনে ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে মূল বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সদরে। কিন্তুু এরা দুই ভাই দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেট ২য় তলায় মন্দিরা জুয়েলার্সের নামের একটি দোকান খুলে প্রথমে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে পরে আস্তে আস্তে প্রতারণা শুরু করেন।

প্রথমে বিশ্বাস অর্জন করে পরে প্রতিবেশী বন্ধু বান্ধব সকলের কাছ থেকে টাকার প্রয়োজন হলে হাওলাদ নেন, পরে বিশ্বাস জমানোর জন্য আবার ফেরত দিতেন, কিন্তূ আবার হঠাৎ টাকার প্রয়োজন বলে তার দোকানের চেক দিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে এখন তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে উধাঁও এই প্রতারক দুই ভাই। অনেক লোক জন স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে টাকা নিয়েছেন, এখন সকলের মাথায় হাত,তাদের এই প্রতারনার শিকার হওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলে আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু আমি ও একজন ব্যাবসায়ী আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা ধার নিতেন আবার ফেরত দিলে ও এইবার বলল তার খুব জরুরী টাকা দরকার এক মাসের মধ্যে ফেরত দিবে বলেন।

পরে তাদের দুই ভাই কে আমি আমার ব্যাবসায়ী প্রতিষ্টান থেকে নগদ টাকা ও আমার স্ত্রীর প্রায় বিশ ভরি স্বর্ণ দিয়ে ৮০লক্ষ টাকা প্রদান করলে, তারা আমার কাছে তাদের মন্দিরা জুয়েলার্স এর চেক প্রদান করেন। কিন্তূ বেশ কয়েকদিন যাবৎ তাদের ফোন বন্ধ পাইলে তাদের বাসায় গিয়ে দেখি তাদের বাসা ও বন্ধ, পাশ্ববর্তী লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন আজ বেশ কয়েকদিন যাবৎ বাসায় আসেন না।

বাড়িওয়ালা কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরা বাসা ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি, আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। পরে তাদের বিষয় টি জানাজানি হলে সেই আমার মতো আরো অনেকের কাছ থেকে একই কায়দায় শত শত কোটি আরো অনেক বন্ধু বান্ধব এর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে গেছে এই দুই প্রতারক।

আরো জানা যায়, রনজিত তলাপাত্রের দুই সন্তান রাজেস তলা পাত্র এবং রাকেশ তলা পাত্র মিমি সুপার মার্কেটের মন্দিরা জুয়েলার্সের দোকানটি পুঁজি করে বিভিন্ন গ্রাহক হতে স্বর্ণ মেরামত, নিম্মমানের স্বর্ণ বিক্রি, পুরাতন স্বর্ণের বদলে নতুন স্বর্ণ প্রদান, স্বর্ণ বিক্রির অগ্রীম অর্থ সংগ্রহ করে।

এছাড়াও মিমি সুপার মার্কেটের মন্দিরা জুয়েলার্স দোকানটি বিক্রি করবে বলে বিভিন্ন গ্রাহক হতে কোটি টাকা আত্মসাৎ ও করেছে বলে জানা যায়।বর্তমানে মিমি সুপার মার্কেটের মন্দিরা জুয়েলার্স দোকানটিতে অনেক স্বর্ণ ক্রেতা যারা অগ্রীম স্বর্ণ ক্রয়ের জন্য টাকা দিয়েছে ঐ সকল গ্রাহক প্রতিদিন ভীড় করছে।

একজন গ্রাহকের তথ্য মতে, দোকানটি বর্তমানে তিনি মিমি সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির মাধ্যমে পাশের দোকানদারকে বিক্রি করেছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সীমান্ত দিয়ে তার পুরো পরিবার ভারতে পালানোর চেষ্টা করছে।

ভুক্তভোগী লতা মন্ডল বলেন, তলাপাত্ররা স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। সংসারের দায়বশত প্রায় ১৪ মাস আগে ৭ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধক রাখি তলাপাত্রের কাছে। এর জন্য প্রতি মাসে তাকে ১৫০০ টাকা করে মোট ২১ হাজার টাকা সুদ দিয়েছি। পরে মূল ২০ হাজার টাকা দিয়ে বন্ধকি চেইনটি আনতে গেলে তিনি অতিরিক্ত আরও ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন।

আরেক অভিযোগকারী পলাশ দে জানান, তিনি আরোবী জুয়েলার্সের কারিগর। তার দোকানে হিলভিউ এলাকার ফরিদ মোল্লার স্ত্রী সোনিয়া নামের একজন ক্রেতা আসে বন্ধকি রেখে কিছু টাকা নেওয়ার জন্য। সোনিয়া তার বিপদের কথা জানালে তিনি তার মালিকের সঙ্গে পরামর্শ করে পাশের দোকানদার তলাপত্রের কাছে ১৪ আনা ৫ রতি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ও এক জোড়া কানের পাশা বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা তাকে দেন। মাসখানেক পর মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে গহনা চাইলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। টাকা নিয়েও এখন পর্যন্ত তিনি গহনা ফেরত দেননি।

পাঁচলাইশের আরেক ভুক্তভোগী রাজিব সেন জানান, মাস চারেক আগে একটি স্বর্ণের গহনা রেখে তলাপত্রের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা সুদ দিয়েছেন তাকে। পরে মূল টাকা ফেরত দিলেও এখনও তিনি তার গহনা ফেরত দিচ্ছেন না। তার কাছে প্রমাণ রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে তলাপাত্রদের দোকানে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।এই ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সোলায়মান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পাইলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মোহাম্মদ ইসমাইল (ইমন), স্টাফ রিপোর্টার

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker