চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
নানা অনিয়মের অভিযোগ চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে
চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। ভোটবিহীন বর্তমান পর্ষদ বাতিল করে নতুন নির্বাচনেরও দাবি জানিয়েছে সাধারণ সদস্যরা। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান উইম্যান চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করার আহবান জানান তারা। তা না হলে উইম্যান চেম্বার ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান।
১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেল ৩ টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। নারী উদ্যোক্তা সাদিয়া আফরিনের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেম্বারের সদস্য নুসরাত হোসাইন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন চেম্বার সদস্য শাহানাজ খান, জান্নাতুল মাওয়া মুন্নি। উপস্থিত ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর, নারী উদ্যোক্তা মনোয়ারা বেগম মনি, উইম্যান চেম্বারের সদস্য আমেনা বেগম, নার্গিস রিক্তা, মনোয়ারা বেগম সাকি প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে নুসরাত হোসাইন বলেন, বর্তমানে উইম্যান চেম্বারের প্রারম্ভিক সদস্য ফি ৩৭০০ টাকা এবং প্রতিবছর নবায়ন ফি ১৯০০ টাকা, যা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বান্ধব নয়। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ট্রেডে ট্রেইনার হিসেবে সদস্যদের সুযোগ দেয়া হয় না। চেম্বারের সদস্যদের থেকেও বিভিন্ন ট্রেনিং এর নাম দিয়ে ফি আদায় করা হয়। দিনব্যাপি ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। উইম্যান ট্রেড ফেয়ারে সদস্যদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় লোকসমাগম কম হয় এমন জায়গায় ও বাধ্যতামুলক দুটো করে দোকান বরাদ্ধ দেয়া হয়। এছাড়াও মেলায় অতিরিক্ত স্টল, বিদ্যুৎ ও সিকিউরিটি বিল ধার্য করা হয়। বিগত কয়েকবছর যাবত উইম্যান ট্রেড ফেয়ার নারী উদ্যোক্তা বান্ধব না হওয়ায় অন্যান্য জেলার নারী উদ্যোক্তারা মেলায় অংশগ্রহন করছেনা ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তা হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবত বেশি অর্থের লোভে উইমেন্স ট্রেড ফেয়ার সেকেন্ড ও থার্ড পার্টির কাছে হাত বদল করা হয়েছে। যার কারনে মেলার পরিবেশ নষ্ট হয়ে চেম্বারের সদস্যদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাওনাদী সঠিক সময়ে পরিশোধ করা হয়না। বিগত কয়েকবছর যাবত প্রতিবন্ধী ও হত দরিদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত পরিচালনা পরিষদের কর্মচারী দ্বারা রুঢ় আচরণ ও হেনস্থার স্বীকার হতে হয়েছে। মহামারী ও দুর্যোগ কালীন সময়ে তৃনমুল সদস্যদের খোঁজ খবর রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে একটি চক্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীক ফোরামে বৈষম্য সৃষ্টি করে সাধারণ উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করে রেখেছে। বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে স্বৈরশাসন ও ভোটবিহীন কমিটি দ্বারা পরিচালনা করেছে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই সিডব্লিউসিসিআই এর পরিচালনা কমিটি ও সভাপতি নির্বাচন সিলেকশন প্রক্রিয়ায় হয়ে আসছে। যেখানে সাধারণ সদস্যদের কোন অংশগ্রহণ নেই এবং তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে দুএকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কে কোন পদে থাকবেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাচারীতা ও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এই সংস্থাটি পরিচালিত হয়। যার কারণে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তৃণমূলের উদ্যোক্তা নারী সমাজ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত কমিটিগুলো এই সংগঠনে তৃনমূল ব্যবসায়ীদের সুযোগ না দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে আসছে। এক্ষেত্রে তৃনমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা চাই ব্যবসাবান্ধব চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের ভূমিকা নিশ্চিত করে নতুন কমিটি গঠন করা হোক। বাণিজ্যিক সংগঠনে স্বৈরশাসন ও অনিয়মের কমিটি ভেঙে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হোক। মেম্বারশিপ সহজীকরণ করা হোক। আমরা উইম্যান চেম্বারের বর্তমান কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিচারের দাবি করে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জোর দাবী জানাই।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ঘুরেফিরে চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করে আসার ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা। তাই ভোটবিহীন নির্বাচিত বর্তমান উইম্যান চেম্বার পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। মহিলা চেম্বারকে সংস্কার করতে হবে। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান উইম্যান চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদকে পদত্যাগ করতে হবে। তা না হলে আমরা উইম্যান চেম্বার ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.