চট্টগ্রাম

নগরীর বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ

চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের বিক্ষোভের মুখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের পদত্যাগের ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে আইনী জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন অভিযোগ বেসরকারী বা এমপিও ভূক্ত বিদ্যালয়ের এক বা একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা পদত্যাগ করেছেন বলা হলেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর বলছে এই ধরণের পদত্যাগ পত্র অফিসিয়ালি গৃহিত হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে পদচ্যুত শিক্ষক শিক্ষিকারা বিদ্যালয়ে প্রবেশ ও পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করতে না পারলেও আইনানুগ ভাবে তারা স্বপদেই বহাল আছেন। সেক্ষেত্রে কাজ না করেও বেতন ভাতা ভোগ করার সুযোগ থেকে যাচ্ছে।

এদিকে গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের কারো বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দেলনে অংশ নেয়ায় স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ‘রেড টিসি’ দিয়ে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগে গত ২০ আগস্ট নগরীর চকবাজার ১৭নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বাকলিয়ার বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মাঈন উদ্দিন ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নাজনিন হককে ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর নিয়ে পদত্যাগ করানো হয়।

সেখানে উপস্থিত স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিন এসময় গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি গত ১ আগস্ট শিক্ষার্থী ও আমাদের নিষেধ করেন যাতে কোনো ধরনের আন্দোলনে অংশ না নিই। তারপরও আমরা এবং আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যায়। ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে পালিয়ে যায় সভাপতি।

গত সোমবার প্রধান শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের বলছেন, তোমরা কেন আন্দোলনে গেছ? তোমাদের রেড টিসি দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। এ কারণে সোমবার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডাকা হয়।

নাসরিন জানান, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আসেন। এলাকাবাসীসহ সবাই দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

Image

যদিও এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মাঈন উদ্দিন জানান, তাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডেকেছি। এখানে আন্দোলন কিংবা রেড টিসির কোন কথাই হয়নি। উদ্দেশ্যমূলকভাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে জোর করে স্ট্যাম্পে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমার বাসভবনে হামলা ও মূল্যবান জিনিস পত্র লুট করেছে একদল দুর্বৃত্ত। বিদ্যালয়ের একজন ক্যাজুয়েল শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য যে চাপ দিয়েছে এমন অডিও রেকর্ড তিনি সাংবাদিকদের শোনান৷ তাঁর অভিযোগ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধে তাঁরা দুই শিক্ষককে বলি দেয়ার চেষ্টা করছে।

এই ঘটনার সময় সেখানে সেনা বাহিনীর সদস্যদের সাথে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা উপস্থিত ছিলেন। এই পদত্যাগের প্রসঙ্গে তিনি জানান, সেদিন আমি আমার শিক্ষকদের রক্ষা করতে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও একজন শিক্ষিকার কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পদত্যাগ পত্র লিখানো হয়েছে। পরিস্থিতিটা এতোটাই উত্তপ্ত ছিলো যে এসব করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না।

সেই পদত্যাগ পত্র গৃহিত কিংবা কার্যকর হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আসলে এভাবে কাউকে পদত্যাগ করালে সেটি প্রক্রিয়াগত ও আইনগত ভাবে গ্রহণ করার সুযোগ থাকেনা। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঐ দু’জন শিক্ষককে সেনা বাহিনীর সহায়তায় নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এবং যেহেতু বিদ্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে তাই তাঁদেরকে কাজে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছি কিন্তু আইনগত ভাবে তারা কিন্তু এখন স্বপদেই বহাল আছেন।

Image

“তিনি জানান, যেহেতু দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বিদ্যালয় গুলোর পরিচালনা পর্ষদের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন। তবে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে এই পরিচালনা কমিটির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ফলে আইনী জটিলতার কারণে এখনই এই পদত্যাগ পত্র গ্রহণ কিংবা নতুন কাউকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব নয়।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আন্দোলন চলাকালে একাধিক শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। এই প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এখানে দ্বায়িত্বে থাকা কালিন এখন পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন দূর্ণীতি বা অন্য কোন অভিযোগ পাইনি। যদি তেমন কোন অভিযোগ উত্থাপিত হতো তাহলে এতোদিনে সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ছিল।

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা দূর্ণীতির প্রসঙ্গে শিক্ষক মো: মাঈন উদ্দিন বলেন, গত অর্থবছরের সকল হিসেব ও আয় ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় ডকুমেন্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত টিম যাচাই বাছাই করে দেখেছেন। যদি আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকতো তাহলে এতোদিন আমার বিচার করা হলো না কেন? আমি যখন এই বিদ্যালয়ে জয়েন করি তখন যা ফান্ড জমা ছিল আজ তার তিন গুন বেশী ফান্ড স্কুলের তহবিলে জমা আছে৷ সর্বপরি আমার স্কুলের সার্বিক রেজাল্ট অত্র থানা এলাকার মধ্যে অতন্ত ভালো। এই স্কুলের জন্য রক্তঘাম পানি করে আজ অপবাদের তিলক মাথায় নিয়ে ঘুরছি, শুধু স্ত্রী-সন্তানের দিকে তাকিয়ে আত্মহত্যা করা থেকে বিরত আছি না হয় এমন অপমানের পর বেঁচে থাকার ইচ্ছা কাজ করছেনা।

Author

মোহাম্মদ ইসমাইল (ইমন), স্টাফ রিপোর্টার

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker