বরগুনা

জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে দিলু বেগমের মানবেতর জীবনযাপন!

বাঁশ দিয়ে চাপা দেওয়া ছাউনি, বাঁশের বেড়া এবং পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে  বসবাস করছেন হত-দরিদ্র দিলু বেগম। মাথা গোঁজার ঠিকানা পৈতৃক ভিটার ছোট এই ঘরটি। জরাজীর্ণ, ভাঙা, লক্কড়-ঝক্কড় ঝুপড়ি ঘরে মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে দিলু বেগম। রোদে শুকিয়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করেন ওই ভাঙা ঘরে। বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ঘরের মেঝে। এবার শীতে কিভাবে রাত কাটাবেন সেই চিন্তাই করছেন দিলু বেগম।

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্র বাড়ি রসুলপুরে যাও’ পল্লীকবি জসীম উদ্দীন’র বিখ্যাত এই কবিতা আমরা সবাই পড়েছি। কবিতার মতো আসমানী না হলেও কাছাকাছি একজনের সাথে দেখা হলো বরগুনা  জেলার আমতলী উপজেলার ২নং কুকুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড  কেওয়াবুনিয়া গ্রামে । তার নাম, দিলু বেগম (৬৫) পিতা- নীল গাজী মাদবার, মাতা- মইয়র জান। প্রায় ২৩ বছর আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। নিজের বলতে কিছু নেই। সেই থেকে অন্যের বাড়ি কাজ করে, চেয়ে চিন্তে খেয়ে না খেয়ে বাবার বাড়িতে ছোট একটি ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন দিলু বেগম। 

দিলু বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘শুনেছি সরকার কত গরিবগো সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগো কেউ খবরও নেয় না। সরকার নাকি কত ঘর দেয় আমারে একটা ঘর দিলে মাথা গোঁজার ঠাঁই  পাইতাম। খুব কষ্টে  জীবন যাপন করছি। খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। এই ভাঙ্গা ছোট ঘরে খুব কষ্টে থাকি। 

সরেজমিনে দিলু বেগমের কেওয়াবুনিয়া তার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উপরে পলিথিনের  ছাউনি, ভাঙ্গা বেড়া এবং মাটির ঘরের মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। এরকম একটি নামমাত্র ঘরে বসবাস করছেন দিলু বেগম।

দিলু বেগম জানান, আমার একটি মেয়ে আছে  অনেক গরিব ঘরে বিয়ে দিয়েছি,তাদের নিজেরই চলতে কষ্ট আমাকে দেখবে কিভাবে। প্রায় ২৩ বছর আগে স্বামী আমাকে ছেড়ে  গেছেন। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে অসহায় হয়ে পড়েছি । সেই থেকে বাবার জমিতে কোন রকম ঘর তৈরি করে থাকছি। রান্না করার শক্তি নেই, রোগ  আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারা দিন বিছানায় পরে থাকি। দু:চিন্তা কুড়ে কুড়ে খায়। এই ঘর টুকু যদি ভেঙে পড়ে তাহলে রাস্তায় পরে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। শীতের রাতে পুরাতন কাপর দিয়ে দরজা জানালা ঘিরে রাখি। ভাবছি এবার শীতের মধ্যে বেঁচে  থাকতে পারবো কিনা জানিনা। এতো কষ্ট এই বয়সে সহ্য হয় না। তাই আল্লাহ পাক নিয়ে গেলে বেচে যাতাম। সারা জীবনে একটু সুখের মুখ দেখলাম না। জমিজমা না থাকায় সংসার চালাতে  অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় দিলু বেগমকে। অন্যের বাড়ি কাজ না পেলে অনাহারে থাকতে হয়। 

১নং কেওয়াবুনিয়া ওয়ার্ডের মেম্বার জহির মাতুব্বর জানান, দিলু বেগমের একটি বয়স্ক ভাতা কার্ড ছিল ২ মাস পরে অজানা কারণে সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আমি সুযোগ পেলে দিলু বেগমের পাশে থেকে উপকার করার চেষ্টা করবো।

Author

শ্রী মিথুন, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ১১ জুন থেকে মিশন ৯০ নিউজে বরগুনা জেলার সংবাদ দাতা হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker