সারাদেশ

ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছে লাখো মানুষ

মতলব লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়

পবিত্র ঈদুল ফিতরের উপলক্ষে দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটি শেষে কর্মস্থলে কোন ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন দেশের সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী এবং স্কুল,কলেজ, ভার্সিটিগামীসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৬ এপ্রিল) থেকে সরকারি অফিসগুলো পুনরায় চালু হবে। এর আগে গত ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস।

এদিকে ঈদের ছুটি শেষে শনিবার (৫ এপ্রিল) থেকে নাড়ির টানে ঈদ করতে গ্রামে আসা মানুষগুলো রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। সরকারি অফিসগুলো আগামীকাল (৬ এপ্রিল) থেকে খুললেও অধিকাংশ বেসরকারি অফিসের ছুটি আগেই শেষ হয়ে গেছে।

ফলে জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত নগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন চাঁদপুরের মতলবের ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো। গেলো ২০ মার্চ ঈদুল ফিতরের ছুটির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৩ এপ্রিল থেকে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সেই অনুযায়ী, সরকারি ছুটি ২৮ মার্চ (শুক্রবার) শুরু হয়ে  আজ ৫ এপ্রিল (শনিবার) পর্যন্ত চলেছে, যা টানা ৯ দিনের ছুটি।

সোমবার (৩১ মার্চ) চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। এবারের ঈদে ৫ দিনের সরকারি ছুটির জন্য গত বছর ১৭ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল। ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ছুটি ঘোষণা হওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরা ৯ দিনের ছুটি উপভোগ করেছেন, কারণ ৪ ও ৫ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিলশনিবার (৫ এপ্রিল) চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল লঞ্চঘাট, মোহনপুর লঞ্চঘাট,এখলাছপুর লঞ্চঘাট ও আমিরাবাদ লঞ্চঘাটসহসহ বিভিন্ন লঞ্চঘাটে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের উদযাপন শেষে এখন প্রতিটি লঞ্চঘাটে কর্মস্থলে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে নদীপথে ঘরমুখী হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থলে  ফিরছে। মতলবের সবচেয়ে পুরনো ষাটনল লঞ্চঘাট (লঞ্চটার্মিনাল)। এঘাট থেকে লঞ্চযোগে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থেকে নিজ কর্মস্থল রাজধানী ঢাকা,নারায়নগঞ্জে ফিরতে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। আধাঘণ্টা-৫০ মিনিট পর পর যাত্রী নিয়ে ঘাট থেকে ছাড়ছে লঞ্চগুল।

শনিবার (৫ এপ্রিল)) সকাল সাড়ে ১০টায় মতলব উত্তরের ষাটনল লঞ্চঘাটে ঘুরে দেখা গেছে-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপথে লঞ্চে সিডিউলের লঞ্চগুলোও চাঁদপুর এবং মতলব থেকে নারায়ণগঞ্জের এবং ঢাকার সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। এসময় যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। লঞ্চগুলোতে কিছুটা যাত্রী চাপ দেখা গেলেও যাত্রা ছিল তুলনামূলকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যময়, আর ঈদযাত্রা কষ্টকর না হওয়ায় ঘরমুখো মানুষরা নির্বিগ্নে কর্মস্থলে ফিরে যেতে পেরেছেন। তবে লঞ্চঘাটে পৌছতে বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মতলব উত্তরের কালিপুর থেকে নারায়নগঞ্জের উদ্দ্যেশে ছেড়ে আসা এমভি শাহাব উদ্দিন এক্সপ্রেস -১ সকাল সাড়ে ১০টা ৫০ মিনিটে ষাটনল ঘাটে আসে। এই লঞ্চে নারায়নগঞ্জের উদ্দ্যেশে যাত্রী উঠে প্রায় আড়াই থেকে তিন শতাধিক যাত্রী। এ লঞ্চের কেরানী মোঃ বিল্লাল হোসেন জানান,আমরা যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যস্থলে পৌছাতে আন্তরিক রয়েছি। কোনো অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছিনা। সেই সাথে কোনো অতিরিক্ত ভাড়াও নেওয়া হচ্ছেনা।

ষাটনল লঞ্চঘাটের ইজারাদার মোঃ দবির হোসেন বলেন, বিগত দিনের তুলনায় আজ  ষাটনল লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের একটু ভিড় বেশি। লঞ্চে ভিড় এখন তেমন দেখা যায় না। ঈদের আগের দুইদিন এবং ঈদের ছুটির শেষ দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার মানুষের চাপ থাকা স্বাভাবিক। আমরা যাত্রীদের নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাতে সার্বিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়লে যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে সু-শৃঙ্খলভাবে উঠতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, লম্বা ছুটি ছিল, এ কারণে মানুষ ধাপে ধাপে রাজধানীতে ফিরছে। গত দু’দিনের তুলনায় রাজধানীতে ফেরা মানুষের চাপ আজ কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী অধিকাংশ মানুষ কাজের টানে ফিরে যাবে। 

এদিকে যাত্রাবাড়ি ডেমরা কোনাপাড়ায় স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড.মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ শাহরিয়ার খান বলেন, এমনিতে পড়ালেখার প্রচন্ড চাপে ছিলাম। খুব হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এবার ঈদে আমার কলেজ ১৩ দিন বন্ধ দিয়েছিলো। অনেক দিন পড়ে একটা লম্বা ছুটি পেয়েছি। তাইতো লম্বা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ উদযাপন করতে এসেছিলাম। আলহামদুল্লিাহ, খুবই ভালোভাবে ঈদ করতে পেরেছি। মহাখুশি। আগামী ৮ এপ্রিল আমার কলেজ খোলা। তবে সামনে পরীক্ষা, তাছাড়া ভীড় ও ঝামেলা এড়াতে একটু আগেবাগেই চলে যাওয়া। 

মতলব উত্তর উপজেলার ঠাকুরচর গ্রামের আল-আমিন প্রধান জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি এসেছিলাম। যদিও এখন লঞ্চে যাত্রী বেশি থাকাতে কষ্ট হবে, তবে ঈদ আনন্দের কাছে তা কিছুই নয়। কারণ লঞ্চের চাইতে সড়ক পথে ভ্রমণ আরও বেশি কষ্টের। তাছাড়া বাবা-মায়ের সাথে নির্বিঘ্নে ঈদ করতে পেরেছি এতেই শোকরিয়া। এখন প্রবাস থেকে বাড়িতে এসেছেন উপজেলার চরকাশিম বোরচরের শাহআলম বাদশা।

তিনি জানান, আমি গতমাসে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছি আমার সন্তান ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তাই ঢাকাতেই থাকা হয়। তাই স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি আসছিলাম। সন্তানের মাদ্রাসা খোলা তাই লঞ্চযোগে আজ ঢাকায় যাচ্ছি। লঞ্চে নদী পথে যাতায়াত করতে অনেক সুবিধা ও আরাম রয়েছে বলে জানান তিনি।

স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন ফারজানা আক্তার সাথী তিনি বলেন, ঈদ আসলেই সন্তানরা বাড়ির অপেক্ষায় থাকে। বাড়িতে ঈদ উদযাপন করলে আমাদের চাইতে শিশুরা বেশি আনন্দ পায়। দুই সন্তানকে নিয়ে মতলবে ঈদে এবার লম্বা ছুটি পড়েছিলো। তাইতো ঈদে গ্রামে আসা হয়েছিলো। আমার শ্বশুর-শাশুরি এবং পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে ঈদ করে আজকে ঢাকায় যাচ্ছি। কাল রবিবার স্বামীর অফিস খোলা। তাই আজ লঞ্চযোগে আবারো ঢাকায় ফেরা। 

বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক পিপিএম বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাটগুলোতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এখন ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থল রাজধানীতে ফিরছে মতলবের মানুষগুলো। নদী পথে নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশ সদস্যরা টহলে রয়েছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে কর্মস্থলে যেতে পারেন সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং নৌ পুলিশ কাজ করছে।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker